জি কে শামীমের দেহরক্ষীর শটগানের লাইসেন্স ভুয়া

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তানভীর হাসান জিকে শামীমের দেহরক্ষী আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরলেও তার শর্টগানের লাইসেন্সটি ছিল ভুয়া। লাইসেন্সে তার স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট উলেস্নখ করা হলেও তিনি অস্ত্রের লাইসেন্স জামালপুর ডিসি অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে ৫৭/২০১৫ নামের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স এই ডিসি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে রুম্মন নামের লাইসেন্স সরবরাহকারীর সন্ধানে নেমেছের্ যাব। জানা গেছে, রাজশাহীর একটি দোকান থেকে এই শর্টগানটি ৩০ রাউন্ড গুলিসহ কেনা হয়। কিন্তু অস্ত্রের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই ছাড়াই কেন বিক্রি করা হলো, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ভুয়া লাইসেন্স সরবরাহকারীর সঙ্গে ওই দোকানের যোগসাজশ থাকতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলের্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম যায়যায়দিনকে বলেন, জিকে শামীমের দেহরক্ষীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের লাইসেন্সগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠালে একটি অস্ত্রের লাইসেন্সের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অস্ত্রের মালিক আমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে লাইসেন্স সরবরাহকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নেমেছের্ যাব। তিনি আরো জানান, কয়েক বছর আগে রাজধানীর কাকলী থেকে এ ধরনের লাইসেন্সের অস্ত্রসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সে সময় রংপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের লাইসেন্সের কাগজ জমা দেন। সেটিও জাল বলে বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জামালপুরের ঘটনায় এ ধরনের কোনো কর্মচারী জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, জিকে শামীমের সাথে ৭ দেহরক্ষীদের গ্রেপ্তারের পর অস্ত্রের লাইসেন্সগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ৬ জনের লাইসেন্স সঠিক বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। এর বাইরে আমিনুল ইসলাম তার অস্ত্রের লাইসেন্সটি জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এবং তার সপক্ষে কাগজপত্রও জমা দেন। এরপর সেটি পরীক্ষার জন্য জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানায় (্‌জেএম শাখা) পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে এই নামে কোনো লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি বলে জানানো হয়। লাইসেন্সে আমিনুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের উত্তর ফুলহাতা গ্রাম বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। তার বাবার নাম মো. মনিরুজ্জামান। অস্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয় জামালপুর সদরে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার্ যাব-১-এর সিনিয়র এএসপি নজমুল হক যায়যায়দিনকে জানান, জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অস্ত্রের লাইসেন্সটি জাল বলে জানানো হলে আমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল জানান, রুম্মন নামে জামালপুরের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি লাইসেন্সটি সংগ্রহ করেন। এজন্য তিনি রুম্মনকে ৪ লাখ টাকা দেন। অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রুম্মনই তৈরি করে দেন। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে তার শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যের পাশাপাশি টানা তিন কর-বছরে কমপক্ষে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা আয়কর দিয়ে আসতে হবে। এসব কিছুরই রুম্মন দায়িত্ব নিয়েছিল। এখন রুম্মনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে এ বিষয়ে জট খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে আবেদনের পর ২০১৬ সালে এই লাইসেন্স হাতে পায় আমিনুল। এরপর রাজশাহী জেলার 'রাজশাহী স্টার্ন অ্যান্ড কোং' নামের অস্ত্রের দোকান থেকে ৭০ হাজার টাকায় শর্টগানটি কেনেন আমিনুল। একই সঙ্গে পয়েন্ট ১২ বোরের ৩০ রাউন্ড গুলিও সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি ২০১৭ সালে একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেন। ২০১৯ সালের শুরুতে পত্রিকায় দেহরক্ষী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে জিকে শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমিনুল। দেখতে স্মার্ট হওয়ায় ৩০ হাজার টাকায় চাকরি পেয়ে যান আমিনুল। এরপর থেকে তিনি জিকে শামীমের সার্বক্ষণিক দেহরক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। অস্ত্র আইনে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন বেআইনি এবং নিজের জন্য অস্ত্র বহন করলে তা অন্যর জন্য প্রদর্শন করা যাবে না বলে আইনে স্পষ্ট উলেস্নখ করা হয়েছে। কিন্তু জিকে শামীম ও তার দেহরক্ষীরা এসব কিছুই তোয়াক্কা করতেন না। সূত্র মতে, রাজশাহী থেকে অস্ত্র কেনার সময় ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তখন কার্যালয় থেকে জানানো হয় অস্ত্রের লাইসেন্স সঠিক আছে। এ কারণে তারা আমিনুল ইসলামের কাছে অস্ত্রটি বিক্রি করেন। এ পরিস্থিতিতে টেলিফোনে কার্যালয়ের যে কর্মকর্তা সঠিক বলে রায় দিয়েছিলেন তার সন্ধান করছের্ যাব। ধারণা করা হচ্ছে প্রতারকচক্রের সাথে ওই কর্মকর্তার যোগাযোগ আছে। তদন্ত সূত্রমতে, যেদিন আমিনুলের অস্ত্রের লাইসেন্সটি জাল মর্মে জামালপুর থেকে চিঠি আসে, সেদিনই ছিল আমিনুলের রিমান্ডের শেষদিন। এ কারণে তাকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চার্জশিটে এই অস্ত্রের বিষয়টি উলেস্নখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। বাকিদের বিষয়ে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী। তার সহযোগীরা উচ্চ বেতনভোগী দুষ্কর্মের সহযোগী। তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। আসামি শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও মানিলন্ডারিং করে আসছিলেন। অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত শামীমের সাত দেহরক্ষী হলেন- নওগাঁর দেলোয়ার হোসেন, গোপালগঞ্জের মুরাদ হোসেন, বাড্ডার জাহিদুল ইসলাম, যশোরের শহিদুল ইসলাম, ভোলার কামাল হোসেন, নীলফামারীর সামসাদ হোসেন ও বাগেরহাটের আমিনুল ইসলাম। উলেস্নখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে বিদেশি মদসহ শামীমকে গ্রেপ্তার করের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। পাশাপাশি তাঁর অফিস থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। এই ঘটনায়র্ যাব বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, অর্থপাচার ও মাদক আইনে মামলা করে।