গতকালের রাজধানী

রণসাজে পুলিশ : রায়ট কার, জলকামান

দাঙ্গাবাজদের প্রতিহত করতে নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, এমনকি প্রয়োজনে রাবার বুলেট চালাতেও কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের তিনটি ফটকে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। এ সময় সাংবাদিক ও আইনজীবীদের পরিচয়পত্র দেখে আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে দেয় পুলিশ -স্টার মেইল
খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গোটা নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিশেষ করে আদালত প্রাঙ্গণ এবং এর আশপাশের এলাকায়র্ যাব-পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দার সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়। স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান ও রায়টকারের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী আর্মড ফোর্স ও দাঙ্গা পুলিশ। অশুভ কোনো চক্র কোনো ধরনের তান্ডব চালানোর চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক তাদের প্রতিহত করতে নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, এমনকি প্রয়োজনে রাবার বুলেট চালাতেও পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নগরীর নিরাপত্তায় মেট্রোপলিটন এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ডিএমপির প্রায় ৩ হাজার পোশাকধারী ফোর্স ও ১ হাজার রিজার্ভ ফোর্সসহ ৬ হাজার সদস্য মোতায়েন রাখা হয়। এছাড়া টহলে ছিলর্ যাবের প্রায় এক হাজার সদস্য। দাঙ্গা ফোর্সের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), সোয়াত টিম ও বোম ডিস্পোজাল টিমকে বুধবার মধ্যরাত থেকে 'ওয়ার্মআপ' রাখা হয়। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এলাকার কয়েকটি স্থানে বসানো হয় অস্থায়ী চেকপোস্ট। গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন হাইকোর্ট এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে যানবাহন ভাঙচুর ও জনদুর্ভোগ তৈরি করায় এবার আগের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন বিএনপির পক্ষ থেকে উচ্চ আদালত এলাকায় নাশকতা চালানো হয়েছিল। ওইদিন তারা রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর চালায়। তাই এবার পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো ঢাকা শহরেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের- এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এবং জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। জানা গেছে, জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এ জন্য বুধবার রাতে বৈঠকে বসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। এ সময় শুনানিকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের তান্ডব ঠেকাতে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় \হবৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রমনা জোনের মৎস্য ভবন, শাহাবাগ মোড়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, দোয়েল চত্বর, কাঁটাবন, প্রেসক্লাবের সামনে, হাইকোর্টের মাজার গেটের ভেতর-বাইরে, সামনের রাস্তায় ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেটের ভেতর ও বাইরে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সংশ্লিষ্ট থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা এসব এলাকায় তৎপর ছিল। এছাড়া পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট থেকেও কয়েক হাজার বাড়তি পুলিশ সদস্যকে আনা হয়। বিএনপি পার্টি অফিসের সামনেও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটকও করে পল্টন থানা পুলিশ। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে শাহবাগে জলকামান ও মাজার গেটে এপিসি রায়ট কার প্রস্তুত রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেহ তলস্নাশি ও পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকেই আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে আদালতপাড়ায় পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দীকি জানান, বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিসন্ধি ছিল কি না তা যাচাই-বাছাই চলছে। এছাড়া এদের মধ্যে কেউ নাশকতা মামলার আসামি কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে দাবি করেন ওসি। ডিএমপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কোথাও যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এজন্য বুধবার রাতে ডিএমপির ৮টি ক্রাইম জোনকে বিশেষ নির্দেশনা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসিরা রাতেই থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান সড়কে পুলিশের নিয়মিত টহল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এছাড়া বাসস্টপেজগুলোতে আলাদা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনো ধরনের খবরে দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পৌঁছার জন্য প্রস্তুত রাখা হয় আলাদা আলাদা মোবাইল টিম। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় সবসময়ই পুলিশ কাজ করে। তবে বৃহস্পতিবার যেহেতু খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ছিল সে কারণে একটু বাড়তি সতর্ক ছিল পুলিশ। \হ