খালেদার জামিন শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির মেডিকেল রিপোর্ট না আসায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার জামিন প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ১২ ডিসেম্বর বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দন্ড নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তির পথ খুলবে। গত ২৮ নভেম্বর তার জামিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ওই মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে আসার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আপিল বিভাগে শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ভিসি আমাকে ইনফার্ম করেছেন, খালেদা জিয়ার কিছু টেস্ট হয়েছে, কিছু বাকি আছে। এর জন্য সময় প্রয়োজন।' প্রধান বিচারপতি এ সময় আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে তার আগেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ সময় পুরনো একটি মেডিকেল প্রতিবেদন আদালতে দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, 'এই রিপোর্ট মেডিকেল বোর্ডের না। এর অথরিটি কারা? এ সম্পর্কে যা বলার ওইদিন (১২ ডিসেম্বর) বলব। পূর্বাপর জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দিয়ে গত বছর ২৯ অক্টোবর রায় দেয় বিচারিক আদালত। পাশাপাশি তাদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। আর ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার চার দিন পর গত বছর ১৮ নভেম্বর খালেদার দন্ড বাতিল ও খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এ আপিলের সঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদার জামিন আবেদনও করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ওই আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। সেদিন বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া অর্থদন্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা দেওয়ার পাশাপাশি খালেদার জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে মামলার নথি তলব করে হাইকোর্ট। গত ২০ জুন এ মামলার রেকর্ড (মূল নথি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়লে গত ২৩ জুন নথিভুক্ত জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এরপর খালেদা জিয়া ও দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শোনে আদালত। অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদাসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এ তিন বিবেচনায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী কায়সার কামাল। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া আগে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চায়। এ ধরনের মামলায় ইতোপূর্বে উচ্চ আদালত থেকে অনেকের জামিন পাওয়ার কথা তুলে ধরে বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার জামিন দাবি করে আসছেন তার আইনজীবীরা। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার জামিন আটকে রেখে তাকে 'গুরুতর শারীরিক ক্ষতির' দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, জামিনের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার, এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।