বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ভারত

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সহায়তা যেমন ছিল, তেমনি বাংলাদেশকে ভারত যে স্বীকৃতি দেবে-সে ব্যাপারে আস্থার অভাব ছিল না। তবে আইনগতভাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি জরুরি হয়ে পড়েছিল। মুজিবনগর সরকারের অনুরোধে একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অন্য কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয় বাংলাদেশকে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিচিতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারতে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর ভিয়েতনামে যুদ্ধরত দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু রণাঙ্গনে ততক্ষণে পাকিস্তানি বাহিনী পলায়ন শুরু করে।

মেজর জলিলের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা তখন সাতক্ষীরা মুক্ত করে খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, বেলা ১১টার সময় অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফত ঘোষণা করা হলো যে- ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি অধীর আগ্রহে দিনটির জন্য প্রতীক্ষায় ছিল। সংবাদটা শুনে মন থেকে চিন্তা ও উত্তেজনা দূরীভূত হলো। হঠাৎ স্বীকৃতির এই ঘোষণা শুনে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির বিধ্বস্ত অন্তর গর্বে ফুলে উঠল।

শেরপুরের পানিহাতা, নালিতাবাড়ী বাওরামারী আগেই মুক্ত হয়েছে। ঝিনাইগাতীর আহম্মদনগর পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন কোম্পানি কমান্ডার মো. রহমতুলস্নাহ। তারা পৌঁছার আগেই পাকবাহিনী ঘাঁটি ছেড়ে চলে গেছে। ভোরবেলায় আহম্মদনগর ক্যাম্প রেড করে শেরপুর সদরে আসার পথে আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের বাড়ি ঘেরাও করা হয়, কিন্তু তাকে ধরা যায়নি। তারা জানতে পারেন, সে আগের রাতে আহম্মদনগর ক্যাম্পের পাকবাহিনীর সঙ্গে জামালপুরে চলে গেছে। সকাল ৭টায় শেরপুর শহরে পৌঁছান। কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টার এলো। পদার্পণ করলেন মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জে. আরোরা। রহমতুলস্নাহর বাহিনীসহ হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপাগল মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানাল। মুহূর্তেই আদেশ হলো- আজ বিকাল ৫টায় জামালপুর আক্রমণ করতে হবে। জামালপুর অ্যাম্বোসের জন্য রহমতুলস্নাহ তার বাহিনীকে নান্দিনায় ডিফেন্স দেওয়া হলো- যাতে হানাদার বাহিনী রেলযোগে পালাতে না পারে।

পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও মুক্ত করে সেদিন বীরগঞ্জ ও খানসামার পাক অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। এই বাহিনীতে ছিলেন গেরিলা কমান্ডার মাহবুব আলম, পরে যিনি লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এপিকধর্মী সত্য ভাষ্য গেরিলা থেকে সম্মুখযুদ্ধে। এদিকে লাকসাম, আখাউড়া, চৌদ্দগ্রাম, হিলিতে মুক্তিবাহিনী দৃঢ় অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে না পেরে পিছু হটে বিকল্প অবস্থান নেয়। রাতে আখাউড়া ও সিলেটের শমসেরনগর যৌথবাহিনীর অধিকারে আসে।

পশ্চিম সেক্টরে ৪-৫ ডিসেম্বর টানা দুই দিন যৌথবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করার পর এদিন (৬ ডিসেম্বর) পাক ৯ ডিভিশন (জেনারেল আনসারি) যশোর ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। যশোর আক্রমণে মিত্রবাহিনী ব্রি ঘোরিয়াও আহত হন। অবশ্য পাকিস্তানিরা যশোর ত্যাগ করলেও যৌথবাহিনী শহরে প্রবেশ করে ৭ তারিখে। এদিন যৌথবাহিনী হেঁটে ঝিনাইদহ পৌঁছে এবং শহরটি মুক্ত করে।

এদিন ডঝঅএ-এর বৈঠকে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (ঈওঅ) প্রধান রিচার্ড হেলম্‌েসর সমীক্ষায় বলা হয়-১০ দিনের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী পূর্বাঞ্চলে এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবে। মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষে উপস্থিত জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড বরং পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের প্রতিরোধের মেয়াদ তিন সপ্তাহ অবধি স্থায়ী হতে পারে বলে অভিমত দেন। এর পরই শুরু হয় সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণের উদ্দেশ্যে কিসিঞ্জারের সুচিন্তিত প্রশ্নমালা-পূর্ব পাকিসন্তানের বিহারিদের হত্যা করা শুরু হয়েছে কি না, এই আসন্ন রক্তপাত বন্ধের উপায় কী, যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাবের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সাধারণ পরিষদে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সে দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে কি না, ভারতের নৌ অবরোধ বেআইনি কি না এবং তার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদের খসড়া শিগগিরই তৈরি করা যাবে কি না, জর্ডান ও সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানের সমরাস্ত্র পাঠানোর পথে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কোনো বাধা আছে কি না, যদি থাকেও প্রেসিডেন্ট নিক্সন যেহেতু পাকিস্তানের পরাজয় রোধ করতে চান, সেহেতু এই বাধাগুলো অপসারণের উপায় কি ইত্যাদি। সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে সম্ভাব্য যুক্তি ও উপায় অন্বেষণই ছিল ৬ ডিসেম্বরের ডঝঅএ বৈঠকের উলেস্নখযোগ্য দিক। পাশাপাশি শুরু হয় বাংলাদেশে পাকিস্তানের আসন্ন পরাজয় রোধ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তীব্র কূটনৈতিক চাপ। প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভের কাছে প্রেরিত এক জরুরি বার্তায় জানান, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য ভারতকে সামরিকভাবে নিষ্কীয় না করে, তবে পরবর্তী মে মাসে প্রস্তাবিরত রুশ-মার্কিন শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া সরাসরি ভারতের ওপর জাতিসংঘের চাপ প্রয়োগ করার জন্য মার্কিন প্রশাসন টহরঃরহম ভড়ৎ চবধপব ধারার অধীনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সাধারণ পরিষদে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎপর হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78680 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1