বিআইডিএসের গবেষণা

মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভারতের পেঁয়াজের বাজার আগাম পর্যবেক্ষণ জরুরি

'পেঁয়াজ নিয়ে এমন গবেষণা এই প্রথম। গবেষণায় উঠে এসেছে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে তিনটা জিনিস গুরুত্ব দিতে হবে-উৎপাদন বাড়ানো, যোগান ও ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রণ।'

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আমদানিকৃত পেঁয়াজ -ফাইল ছবি
সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে অত্যাবশ্যক পণ্যটি। দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নূ্যনতম মূল্য প্রতি মেট্রিক টনে ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। চলতি বছরে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়ে। দাম যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাজারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন দেশের পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি ও প্রতিযোগিতার অবস্থা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ ছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও খাদ্য অধিদপ্তর এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন গবেষকেরা। বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদের নেতৃত্বে 'অনিয়ন মার্কেট অব বাংলাদেশ: রোল অব ডিফরেন্ট পেস্নয়ার্স অ্যান্ড অ্যাসেজিং কম্পিটিভন্স' নামক মূল গবেষণাটি করা হয়। বিআইডিএস'র গবেষণায় বলা হয়, পেঁয়াজ ৬০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন থেকে আসে, বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ ভারত থেকেই মূলত পেঁয়াজ আমদানি করে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভারতের বাজার সব সময় পর্যবেক্ষণ জরুরি। ভারতে বন্যার সময় থেকেই বাংলাদেশের আরও সতর্ক হয়ে বিকল্প বাজার খোঁজা জরুরি ছিল বলে মনে করে বিআইডিএস। গবেষণায় আরও বলা হয়, পেঁয়াজ অত্যাবশ্যক পণ্য। ধনী-গরিব সবার কম বেশি পেঁয়াজ লাগে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে ব্যক্তিগতভাবে সবাই পেঁয়াজ মজুত বাড়িয়ে দিয়েছে বাড়তি দাম পাওয়ার আশায়। আমদানিনির্ভর কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধানের মতো পেঁয়াজের হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এ ছাড়া যখন পেঁয়াজের দাম কম থাকে তখন সরকারের উচিত পেঁয়াজ কিনে মজুত করা। যাতে আপৎকালীন সময়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যায়। প্রতিটি পরিবারে মাসে চার থেকে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগে। সুতরাং, ৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনলে বাড়তি এক হাজার টাকা গরিব মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। তাই দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোসহ ভারতীয় বাজার মনিটরিংয়ে জোর দেওয়ার কথা বলা হয় বিআইডিএসের গবেষণায়। গবেষণায় বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ১৬ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। বাকি ৮ থেকে ৯ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়। যার ৯৫ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট আমদানির ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে এসেছে। এরপরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০০ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে এসেছে। এর পাশাপাশি চীন, মিশর, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সুতরাং বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার ঠিক রাখতে ভারতের বাজার মনিটরিং জরুরি বলেও বিআইডিএসের গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়লেও জনসংখ্যা বাড়ায় ঘাটতি বাড়ছে। ফলে উৎপাদন ও ঘাটতি সমানতালে বাড়ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ১১ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন, এ সময়ে মাত্র ৩ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এ অর্থবছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা হয় ১৫ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। পাঁচ বছর পর উৎপাদন বাড়লেও ৬ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশে চাহিদা মেটাতে গবেষণায় হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের কথা তুলে ধরেছে বিআইডিএস। গবেষণা প্রসঙ্গে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, 'পেঁয়াজ নিয়ে এমন গবেষণা প্রথম। গবেষণায় উঠে এসেছে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে তিনটা জিনিস গুরুত্ব দিতে হবে-উৎপাদন বাড়ানো, যোগান ও ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রণ। হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। সরকারের উচিত পেঁয়াজের মৌসুমে পেঁয়াজ কিনে মজুত করা। যখন পেঁয়াজ থাকবে না তখন কম দামে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।' তিনি বলেন, 'পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমরা ভারতনির্ভর। তাই ভারতের বাজার আমাদের আগে মনিটরিং করতে হবে। কারণ ভারত না খেয়ে আমাদের পেঁয়াজ দেবে না। তাই ভারতের সংকট হলে দ্রম্নত সময়ে আমাদের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।'