বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হায়েনামুক্ত গোপালগঞ্জ শেরপুর নোয়াখালী ও সাতক্ষীরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। পুরো বাংলাদেশ তখন বিধ্বস্ত পাক হানাদার এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বর্বরতম তান্ডবে। তবে ৪৩ বছর আগের এই ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল বাংলাদেশ। চারদিকে উড়তে থাকে শহীদদের পবিত্র রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা। আজকের শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ বা জনযুদ্ধে একাত্তর সালের ৭ ডিসেম্বর হায়েনামুক্ত হয় গোপালগঞ্জ, শেরপুর, নোয়াখালী, কুমিলস্নার বগুড়া, সাতক্ষীরা আর সিলেটের বালাগঞ্জ। এছাড়া সেদিন জেলা শহর হিসেবে প্রথম মুক্ত হয় যশোর। মুক্ত অঞ্চলগুলোতে নামে মানুষের ঢল। সদ্য রণাঙ্গন ফেরত অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মায়ের কোলে চড়ে শিশু, বাবার হাত ধরে সন্তান, কপালে গামছা বেঁধে কিশোর, কৃষাণের হাত ধরে কৃষাণী, যুবক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ অংশ নেন মুক্তির আনন্দ মিছিলে। আনন্দ-উলস্নাসের পাশাপাশি স্বজনহারা মানুষের কান্নায় বাতাসও সেদিন ভারী হয়ে ওঠে।

ইতিহাসের সাক্ষ্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, ৭ ডিসেম্বর সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জ শহরে ঢোকেন। তাদের হাতে ছিল উদ্যত রাইফেল এবং বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত রক্তলাল সূর্য-সংবলিত সবুজ জমিনের পতাকা। মুখে ছিল বিজয়ের হাসি। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর পেয়ে সেদিন পাক হানাদার সেনারা সদর থানা পরিষদসংলগ্ন জয়বাংলা

পুকুরপাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভোর রাতেই মেজর সেলিমের অধীনে হানাদার সেনার একটি দল এলাকা ছেড়ে চলে যায় ঢাকায়। অন্য দলটি কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস স্টেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

গোপালগঞ্জমুক্ত হওয়ার আগে সেখানকার কোটালীপাড়ার রাজাপুরে, কাশিয়ানীর ফুকরা ও ভাটিয়াপাড়ার পাইককান্দি এবং কেকানিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হয়। সাধুহাটির জয়নাল, মিন্টু, রাজাপুরের ইব্রাহীম, রামদিয়ার শ্রীকৃষ্ণ কলেজের ছাত্র ইয়াসির, ফুকরার রবিউল এবং বাহিরবাগের ইমাম উদ্দিনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দাস, গোবরার গোলজার হোসেন চৌধুরী, সিহাব উদ্দিন মোলস্না, আব্দুল লতিফ ফকির, ছাত্রনেতা মাহবুব এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ গোবিন্দ ঠাকুর। এছাড়া শহীদ হন ইউসুফ আলী সিকদার, গোপাল অধিকারী, আব্দুল হাই শেখ এবং শচীন্দ্রনাথ বৈদ্যসহ অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ এবং গ্রামবাসী। অকুতোভয় মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনীর সহায়তায় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করলে শেরপুরও শক্রমুক্ত হয় ৭ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৬ জওয়ান শেরপুরের মাটিতে শহীদ হন। বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধার দল ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর সীমান্তপথে যথাক্রমে ক্যাপ্টেন আজিজ, জাফর ইকবাল ও রুহুল আমিন তোতার নেতৃত্বে ওইদিন শেরপুর শহরে ঢোকে। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারে স্থানীয় শহীদ দারগ আলী পৌরমাঠে অবতরণ করেন।

একাত্তরের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় নোয়াখালীও। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ নোয়াখালী জেলা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মিছিল করেন। ৬ ডিসেম্বর রাত থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের বালাগঞ্জ থানার চারদিকে অবস্থান নিতে থাকেন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে তারা থানা ঘেরাও করে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ধরাশায়ী হয় থানা পুলিশ। মুক্তিযোদ্ধারা থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন।

৩ ডিসেম্বর কুমিলস্নার লালমাই ও মুদাফফরগঞ্জ এবং ৬ ডিসেম্বর লাকসাম শক্রমুক্ত হলে বগুড়া থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা ৭ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। ফলে বগুড়াও মুক্ত হয়।

মুক্তি ও মিত্রবাহিনী মিলে ৭ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর যশোর। তারা একযোগে যশোর শহরে ঢুকে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেন। যশোর মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে খুলনা ছাড়া দেশের পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলই মুক্তি এবং মিত্রবাহিনীর দখলে চলে আসে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পর্যুদস্ত পাক সেনারা আগের দিনই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালায়। পাকিস্তানি সেনারা যে ট্যাংক, কামান, ট্রাক ও জিপ নিয়ে খুলনার দিকে পালায়, তা এলাকার মানুষ জানান মিত্রবাহিনীকে। পাকিস্তানি সেনাদের শক্ত দুর্গগুলোর একটি ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট। যশোরকে মুক্ত করার যুদ্ধ শুরু হয় আগে থেকেই। মুক্ত যশোরে ৭ ডিসেম্বর মানুষের ঢল নামে। মুক্ত এই জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে মুজিবনগর সরকার ব্যবস্থা নেয়। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমন্বয়ে শহর নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠিত হয়। মুক্ত যশোরের টাউন হল ময়দানে ১১ ডিসেম্বর আয়োজিত এক সমাবেশে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78843 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1