বিএনপির তৃণমূল একদফা আন্দোলনের বার্তা

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হাসান মোলস্না ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে না পারলে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না বলে মনে করে বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে আগামী ১২ ডিসেম্বরও দলের শীর্ষ নেত্রী জামিন পাবেন না বলে অধিকাংশ নেতা আশঙ্কা করছেন। এজন্য দলের তৃণমূলের প্রায় সব ইউনিটে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা পাঠানো হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, পরিস্থিতি শান্ত রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এমন হয় তাহলেই আগামী ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। তাহলে এখনই হয়তো সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে না। আর যদি খালেদা জিয়ার জামিন না হয় তাহলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শরু হবে। আদালতের আদেশের পরপরই কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণার মধ্য দিয়ে একদফার আন্দোলন শরু হবে। এ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি রাখতে দেশের প্রতিটি পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, গত ৫ ডিসেম্বর আদালত শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার পরই একদফার আন্দোলনে যাওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের কাছে দলের বিভিন্ন স্তরের চাপ ছিল; কিন্তু দলের নেতা ও এই আইনজীবীরা ১২ ডিসেম্বরের আগে কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলে একদফার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি বিএনপি। আইনজীবী নেতাদের মতে, আদালত চাপমুক্ত থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট- এ দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ দিতে পারে, এ জন্য আদালতকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এ দুই মামলায়ই খালেদা জিয়া আইনিভাবে জামিন পাওয়ার যোগ্য। শুনানি শেষ হওয়ার আগে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আত্মঘাতী। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ইসু্যভিত্তিক ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে। এর অংশ হিসেবে রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে। সোমবারও অঙ্গ দলগুলো মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ বিএনপি সকাল ১১টায় ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে শোভাযাত্রা বের করবে। এছাড়া আগামীকাল বুধবারও একই দিবস উপলক্ষে সেমিনার করবে। সবগুলো কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপির করণীয় বিষয়ে দলের নেতারা হুঁশিয়ারি দেবেন। একদফার আন্দোলনের জানান দেবেন, পাশাপাশি সংসদ থেকে বিএনপির সদস্যদের পদতাগের মাধ্যমে চাপ দেওয়ার হুঁশিয়ারিও থাকবে। এছাড়া কূটনীতিকদের কাছেও আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের আশঙ্কার বিষয়টি জানাবে বিএনপি। এর বাইরে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঢাকাসহ দেশের সব আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' সেস্নাগান দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ যে ১২ ডিসেম্বর ধার্য তারিখ রেখেছে ওইদিন পর্যন্ত বিএনপি দেখবে। জামিন না হলেই কেবল স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে তার আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে। ১২ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপি বাধ্য হয়ে একদফার আন্দোলনে যাবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, একদফা আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাবিহীন রেখে মৃতু্যর দিকে ঠিলে দেবে, তা জাতীয়তাবাদী শক্তি মেনে নিতে পারে না। এখানে ঝুঁকি নিতেই হবে। একই বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে বুঝতে হবে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের কারণে হয়নি। যদি তাই হয়, তাহলে ১২ ডিসেম্বরের পর এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। এই একদফা হবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন।