উন্নত বাতির আশায় অন্ধকারে চার বছর

কবে জ্বলবে ঢাকা উত্তরের এলইডি?

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এলইডি বাতির আলোয় আলোকিত একটি সড়ক -ফাইল ছবি
ফয়সাল খান উন্নত প্রযুক্তি ও দৃষ্টিবান্ধব এলইডি বাতি (লাইট ইমিটিং ডায়োড) লাগানোর আশায় কেটে গেছে চার বছর। সিটি করপোরেশনের পরবর্তী নির্বাচনী ঢাক-ঢোল শুরু হয়ে গেলেও এলইডি বাতি লাগাতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অন্ধকার ও মৃদু আলো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে উত্তর ঢাকার বাসিন্দাদের। যদিও দক্ষিণ ঢাকার পুরনো সব এলাকাতেই এলইডি বাতির আলোতে ঝলমল করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঢাকার দুই মেয়র পুরনো সোডিয়াম বাতি পরিবর্তন করে এলইডি বাতি লাগানোর ঘোষণা দেন। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের শুরুর দিকে একনেকে ডিএনসিসি এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের একটি প্রকল্প পাস হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু ডিএনসিসি'র তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক উন্নত প্রযুক্তির বাতি আমদানি করার জন্য কিছুটা সময় নেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রকল্পটি আর বেশিদূর এগুতে পারেনি। আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর প্যানেল মেয়র ওসমান গণি ও জামাল মোস্তফা দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রকল্পের কাজ এক প্রকার বন্ধ ছিল। এসময় প্রকল্প পরিচালক, প্যানেল মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কেউই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে চাননি। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নতুন মেয়র আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর মেয়াদ বাড়ানো হলেও ২০২১ সালের আগে এলইডি লাইটের দেখা মিলবে না। ডিএনসিসি'র একটি সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের শুরুতে অনুমোদিত প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়লেও বাজেটসহ অন্যন্য সবকিছু আগের মতোই আছে। ওই সময়ের তুলনায় বাজারে এলইডির দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে সব মান ঠিক রেখে পুরনো দামে এলইডি লাইট লাগাতে ঠিকাদারদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। তাছাড়া এখনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এতে বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত বডির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালে মে মাসে। তবে এর আগেই ভোট করার চিন্তা করছে করছে নির্বাচন কমিশন। ফলে সিটি করপোরেশন বর্তমান মেয়রের মেয়াদ থাকাকালীন সময়েও উত্তর সিটির অন্ধকার দূর হচ্ছে না। সূত্র মতে, ডিএনসিসিকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে নির্বাচিত প্রথম মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রযুক্তিতে শহরের সব সড়ক বাতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, বিদু্যৎ সাশ্রয়ী, স্বাস্থ্যসম্মত ও সর্বোচ্চ মানের এলইডি লাইট এবং স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এলইডি বেইজড অত্যাধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি বেইজড কমিউনিকেশন পদ্ধতির এলইডি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বেশি বিদু্যৎ খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি এবং দুর্বল যোগাযোগ পদ্ধতির কেবিনেট বেইজড পাওয়ার লাইন কমিউনিকেশন পদ্ধতির এলইডি স্থাপন করার চিন্তা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে তাদের। এদিকে, উত্তর ঢাকায় লাইট ইমিটিং ডায়োড (এলইডি) না জ্বললেও অনেক আগেই সোডিয়াম আলোর যুগ থেকে আধুনিক এলইডি বাতির যুগে প্রবেশ করেছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পুরনো অংশের প্রায় সব এলাকায় এলইডি বাতি লাগিয়েছে। ফলে ডিএনসিসি এলাকার অন্ধকার সবার চোখে ফুটে উঠে। তাছাড়া ডিএনসিসি এলাকার সড়কের পুরনো বাতিগুলোও ঠিকমতো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। যেহেতু বড় বাজেটে ভালো বাতি লাগানো হবে, সেহেতু কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন। ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এলইডি প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের তুলনায় বর্তমান বাজারে এলইডি'র দাম বেড়েছে। এটা নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। তবে খুব শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যাধুনিক এলইডি লাইট লাগানো হবে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রসঙ্গত, ডিএনসিসির বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য নেয়া একটি প্রকল্প ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। পাঁচ হাজার সিসি ক্যামেরা ও প্রায় ৪০ হাজার এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৩৫৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে, বাকি ৮৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার জোগান দিবে ডিএনসিসি। এই প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৬০০ বাতি লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ডিএনসিসি। ১০ বছরের ওয়ারিন্টিযুক্ত প্রতিটি বাতির দাম ধরা হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।