বাসাতেই খুন হন চীনা ব্যবসায়ী!

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গাঁও জিয়াং হুই
বনানীর নিজ বাসাতেই খুন হন চীনা পাথর ব্যবসায়ী গাঁও জিয়াং হুই। এরপর লাশ গুমের জন্য ভবনের পেছনের ফাঁকা স্থানে নেওয়া হয়। খুনি যেই হোক, তিনি ওই ভবনেই অবস্থান করছিলেন। ঘটনাস্থলের বিভিন্ন ধরনের আলামত পরীক্ষার পর এমনই ধারণা করছেন তদন্ত তদারক সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক বিরোধকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী কারা ওই ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করেছেন তাদের সন্ধান করা হচ্ছে। ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে একটি তালিকাও সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো না হলেও অন্তত ৫ জনকে ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। স্পর্শকাতর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায়না পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় চীনা কমিউনিটির পক্ষ থেকে বুধবার গভীর রাতে একটি মামলা (নং-১১) দায়ের করেন ঝাং শু হং নামের এক ব্যক্তি। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। বুধবার রাতেই জিয়াং-এর স্ত্রী বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তার সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এসপি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ যায়যায়দিনকে বলেন, আশপাশের পরিস্থিতি ও ঘটনাস্থলের আলামত দেখে ধারণা করা হচ্ছে বাসাতেই খুন করা হয় চীনা ব্যবসায়ীকে। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আসা করা যাচ্ছে দ্রম্নতই মামলার রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে। মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে ওই বাসায় কাজে আসেন গৃহকর্মী ফরিদা বেগম। তিনি এসে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ও শোবার ঘরের মালামাল এলোমেলো অবস্থায় পান। তিনি ধারণা করেন, জিয়াং হয়তো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেছেন। এ কারণে তিনি রুম গোছানোর কাজ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর গাড়ি চালক সুলতানও বাসায় এসে মনিবের সন্ধান জানতে চান। এতে ফরিদার মনে খটকা লাগে। এরপর জিয়াং-এর মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। দ্রম্নত তারা ফ্ল্যাটের নিচে এসে দারোয়ান ও বাসার কেয়ারটেকারের কাছে জিয়াং সম্পর্কে জনতে চাইলে তারাও সন্ধান জানেন না বলে জানান। এরপর তারা বিভিন্ন স্থানে সন্ধান শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ভবনের পেছনে গিয়ে মাটিচাপা অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। এসময় মরদেহের কিছু অংশ বাইরে ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ও জিয়াং-এর পরিচিতরা ঘটনাস্থলে আসেন। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এসপি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ যায়যায়দিনকে বলেন, কাজের মহিলা রুম গোছানোর কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও কিছু আলামত আমরা সংগ্রহ করছি। প্রশ্ন হচ্ছে ফরিদা ইচ্ছাকৃতভাবে আলামত নষ্ট করেছেন কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীনা ব্যবসায়ী বেশিরভাগ সময় একাই থাকতেন। মাসে হয়তো দু-একদির জন্য তার স্ত্রী-সন্তানেরা বেড়াতে আসতেন। এ কারণে অন্য কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। রুম থেকে ৫ লাখ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি জিয়াং-এর আঙুলে সোনার আংটিও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, জিয়াং-এর একজন চীনা নারী ব্যবসায়িক পার্টনার রয়েছেন। তিনি বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন। শুক্রবার তার বাংলাদেশে ফেরার কথা। তিনি আসার পর তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মূলত কারও সঙ্গে জিয়াং-এর ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে কিনা জানার চেষ্টা করা হবে। উলেস্নখ্য, বুধবার দুপুরে বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাসার পেছন থেকে মাটিচাপা অবস্থায় চীনা পাথর ব্যবসায়ী গাঁও জিয়াং হুই-এর লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুম করতে মাটিচাপা দেওয়া হয়। নিহত জিয়াং পদ্মা সেতুসহ সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে পাথর সাপস্নাইয়ের ব্যবসা করতেন।