বিদায় বেলায় বানির্কাট

কী করেছি তা এদেশের মানুষই বলবে

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাশার্ স্টিফেন্স বøুম বানির্কাট সোমবার রাতে এক ভোজসভায় বক্তব্য রাখেন Ñযাযাদি
বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাশার্ স্টিফেন্স বøুম বানির্কাট তার এবং তার দূতাবাসের কাজের মূল্যায়নের ভার এ দেশের জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলেন। সোমবার রাতে আমেরিকান চেম্বার অব কমাসর্ আয়োজিত বিদায়ী ভোজসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বানির্কাট বলেন, ‘এখন পযর্ন্ত আমরা যা কিছু বলেছি আর যা কিছু করেছি তা ভেবে দেখতে আপনাদের আর আপনাদের পাঠক-দশর্ককে আহŸান জানাব। তারপর আপনারাই বিচার করুন।’ ড. কামাল হোসেন ও মাকির্ন রাষ্ট্রদূত ‘ষড়যন্ত্র করে সরকার ফেলে দিতে চেয়েছিলেন’ বলে যে অভিযোগ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি করেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি বানির্কাট। তিনি বলেন, দেখুন, আমরা যা কিছু করেছি, ব্যক্তিগতভাবে আমি যা কিছু করেছি, আপনাদের সহযোগী হিসেবেই আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছি। এ দেশের অংশীদার হয়ে ওঠার চেষ্টায় আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছি। কেন? কারণ একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশিদের নয়, বিশ্বকেও চমৎকার একটি স্থান হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। গত ৪ আগস্ট মোটরসাইকেল আরোহী একদল সশস্ত্র লোক মোহাম্মদপুরে মাশার্ বানির্কাটের গাড়িতে হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বানির্কাট সেদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে নৈশভোজে অংশ নিতে। ড. কামাল হোসেন, এম হাফিজউদ্দিন খানসহ বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানেই কথিত সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছিল বলে ইঙ্গিত করে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো আমাদের বন্ধু ছিল না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের পক্ষ হয়ে আমাদের চরম বিরোধিতা করেছিল। এখনো তারা পাকিস্তানের দোসর বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশে মাকির্ন দূতাবাসের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অ্যামচেমের অনুষ্ঠানে বানির্কাট বলেন, আমি এমন একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গবির্ত যে দেশের কল্যাণের ভিত্তি হলো এর জনগণের কল্যাণ। তা না হলে আমরা কমর্সূচি নিতাম না। সন্ত্রাস দমনে সহযোগী হতাম না। এসব যদি আমরা গুরুত্ব না দিতাম তাহলে সংস্কৃতি বিনিময় হতো না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা কূটনীতিবিদের কাজ নয়। ‘আমরা এবং অন্য দূতাবাসগুলো এদেশে সাবির্ক নীতির কথাই বলি; বাক স্বাধীনতা, সংসদ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চনে অংশগ্রহণÑ এসব নিয়েই পরামশর্ দিই আমরা।’ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পকর্ জোরদারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে বানির্কাট বলেন, তিনি ঢাকায় আসার পর গত সাড়ে তিন বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগ পোক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার এখন যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ পৌঁছেছে ৭০০ কোটি ডলারের ঘরে। ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা বানির্কাট বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করাটা তার জন্য ‘আনন্দময়’ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা বাংলাদেশ এখন আর ‘দরিদ্র নয়’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে বানির্কাট বলেন, আন্তজাির্তক বাজারে নিজেদের অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরতে আরও মনোযোগী হতে হবে বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, ‘আপনার গল্পটা আপনাকেই বলতে হবে। সরকারের গল্পগুলো সরকারকে বলতে হবে, ইন্ডাস্ট্রিকে বলতে হবে, সুশীল সমাজকেও বলতে হবে। ‘সবাইকেই এসব বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে, কারণ আন্তজাির্তক অঙ্গনে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে।’ বানির্কাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের হাতে অনেক বিকল্প আছে। তাদের বাংলাদেশে এনে দেখাতে হবে। একবার এখানে এলে তারা চমৎকৃত হবে। তবে সে জন্য সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এদিক দিয়ে অনেক উন্নতি করতে হবে বাংলাদেশকে। আমেরিকান চেম্বার অব কমাসের্র সভাপতি নুরুল ইসলাম বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে তার সাবির্ক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। ২০১৪ সালের শেষে ড্যান মজিনা বিদায় নিলে তার উত্তরসূরি হিসেবে পরের বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় মাকির্ন দূতাবাসের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বানির্কাট। তার উত্তরসূরি হিসেবে সম্প্রতি আলর্ রবাটর্ মিলারকে মনোনীত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন পেলে শিগগিরই বানির্কাটের জায়গায় দেখা যাবে বতসোয়ানায় মাকির্ন মিশনের দায়িত্বে থাকা মিলারকে।