হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রস্তাব

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এই দিনে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে মোকাবিলা করার জন্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ভারতীয় নৌবাহিনীর সমর্থনে সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপর মার্কিন রণতরী সপ্তম নৌবহর যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। পাকিস্তানের মনে যুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার যেটুকু আশা ছিল সেটাও এর সঙ্গে শেষ হয়ে যায়। এদিকে দেশের অধিকাংশ রণাঙ্গনে চলছিল মুক্তিকামী জনতার বিজয়োলস্নাস। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিলসহ নানা রকম প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইতোমধ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলায় অবরুদ্ধ ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। \হঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ক্রমাগতভাবে ভারতীয় মিগের একের পর এক বোমাবর্ষণ এবং স্থলপথে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে দখলদার বাহিনীতে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। চারদিক থেকে পরাজিত হতে হতে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝে ফেলে যুদ্ধে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। ফলে সকালে সব আশা ছেড়ে দিয়ে শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন নিয়াজি। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা সে প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন দিলিস্নর মার্কিন দূতাবাসে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। এরপর ওয়াশিংটন ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের কাছে জানতে চায়, নিয়াজির এই প্রস্তাব পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সমর্থন আছে কিনা। প্রস্তাবের মূলকথা ছিল- 'আমরা যুদ্ধ বন্ধ করেছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত গোটা পাকবাহিনীকে চলে যেতে দিতে হবে, কাউকে গ্রেপ্তার করা চলবে না।' কিন্তু ভারত সরকার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাকবাহিনীকে এই আশ্বাস দিতে রাজি হয় যে, যুদ্ধবন্দিরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবেন। পাকি জেনারেল নিয়াজির শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পেয়ে ভারতীয় বাহিনী মনে করে এটি তার কৌশল। নিয়াজির প্রস্তাবকে তাদের কাছে মনে হলো এটি যুদ্ধবিরতি আত্মসমর্পণ নয়। কিন্তু মিত্রবাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুতেই রাজি নয়। পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজির দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে বিকালে জেনারেল মানেক শ পাকিদের জানিয়ে দেন, শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দেয়া হবে না। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জেনারেল নিয়াজিকে নির্দেশ দেন, ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য তা মেনে নেয়া যেতে পারে। এই নির্দেশ পেয়ে সেনানিবাসে নিজ কক্ষে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন কথিত পরাক্রমশালী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে রাত ২টার মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তারবার্তা পাঠান। এই দিনটি মূলত দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।