আসামি বদল, নিরপরাধ আজিজ কারাগারে

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
আবদুল আজিজ
মূল আসামি আবদুল আজিজ চলে গেছেন কাতারে। তার জায়গায় নিরপরাধ আবদুল আজিজকে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে এমন কান্ড ঘটিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামে। আসামির নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নামে মিল থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও প্রকৃত আসামি আবদুল আজিজের বর্তমান বয়স ৪০ বছর; আর গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল আজিজের বয়স ৬১ বছর। আসামি আবদুল আজিজের পিতা আহাদ আলী কারিগর জীবিত থাকলেও গ্রেপ্তার আবদুল আজিজের পিতা মৃত। আসামি আজিজের মায়ের নাম মর্জিনা বেগম হলেও গ্রেপ্তার আজিজের মায়ের নাম মৃত খাদিজা। চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের মামলার ওয়ারেন্ট কার্যকর করতে গিয়ে নাম, বাবার নাম, গ্রাম একই হওয়ায় আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তারা কিন্তু বলেনি, এই মামলার আসামি নয়। তার নামে অন্য মামলা আছে। সেজন্য তারাও মনে করেছে ওয়ারেন্ট হতে পারে। আদালতে হাজির করলেও বলেনি। পরবর্তীতে আদালতের নথিতে জানা যায় এই আবদুল আজিজ, সেই আসামি নয়। আমরা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেব 'ভুল হয়েছে'। তিনি আরও বলেন, ওয়ারেন্টে নাম-ঠিকানা দেখেই আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। যাচাই করার সুযোগ থাকে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবা?ড়িয়া গ্রামে লোহিত মোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বা?ড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর নবকুমার সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। বাঘারপাড়া থানায় যার নম্বর ?ছিল ১২। তা?রিখ ২৩/১০/০৯ইং। মামলা?টি আদালতে গেলে নম্বর হয় জিআর-১২৭/০৯। মামলা দায়েরের পর ২০১১ সালে ৩০ মার্চ তৎকা?লীন বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত এসআই গাজী আব্দুল কাইয়ুম লুটতরাজ ও বিস্ফোরক দ্রব্যা?দি আইনের ৩(ক) ধারায় ৯ জনকে অ?ভিযুক্ত করে আদালতে চার্জ?শিট দা?খিল করেন। চার্জ?শিটে ৯ আসামির মধ্যে ৭ নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝু?লি (মাঠপাড়া) গ্রামের আহাদ আলী কা?রিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে (জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম আছে আজিজুর রহমান)। চার্জ?শিটে যার বয়স উলেস্নখ করা হয় ৩০ বছর। মামলায় ৮ ও ৯ নং আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের তস?লিমের ছেলে হাশেম আলী ও নুর ইসলামের ছেলে শাহাজানকে। চার্জ?শিট দা?খিলের পর মামলা?টি বদলি করে যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে মামলা?টির নম্বর হয় এস?টি?সি ৬১/১২। আদালত পলাতক আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জা?রি করেন। পু?লিশ ২০১২ সালের ১ মার্চ তা?রিখে প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালত আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ ২০১২ সালের ৫ মার্চ জা?মিনে মু?ক্তি পান। আসামি আব্দুল আ?জিজের আইনজীবী ছিলেন যশোর বারের সাবেক সম্পাদক শাহানুর আলম শা?হিন। সেই থেকে আহাদ আলীর ছেলে আব্দুল আ?জিজ আদালতে নিয়?মিত হা?জিরা দেন। তবে তিন বছর আগে আসামি আব্দুুল আজিজ কাতারে চলে যান। প্রবাসে চলে যাওয়ায় আসামি আব্দুল আ?জিজ আদালতে গরহা?জির থাকেন। ফলে অ?তিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ চল?তি বছরের ৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আবারো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জা?রি করেন। পরোয়ানার ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে চৌগাছা থানার এএসআই আজাদের নেতৃৃৃৃত্বে পু?লিশ প্রকৃত আসামি আহাদ আলী কা?রিগরের ছেলে আব্দুল আ?জিজকে বাদ দিয়ে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আ?জিজকে (একই গ্রামের দফাদারপাড়ার বাসিন্দা) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। জজ আদালত শীতকালীন অবকাশে থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুল আজিজকে তোলা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে নিরপরাধ আব্দুল আ?জিজ কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। চৌগাছা থানার এএসআই আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, আসামির নাম ঠিকানা স?ঠিক থাকার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়ে?ছে। গ্রেপ্তার আব্দুল আ?জিজের প?রিবার থেকেও জানানো হয়?নি যে তিনি মামলার আসামি না।