কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না বায়ুদূষণ!

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার ধুলায় আচ্ছন্ন রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকা
কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান 'এয়ার ভিজু্যয়াল'-এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বুধবারও ঢাকার অবস্থান ছিল সকালে দ্বিতীয়, বিকেলে চতুর্থ। বিকেলে সূচক ছিল ২২৭, যা মাত্রাতিরিক্ত বেশি। সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো কার্যকর না হওয়ায় কমানো যাচ্ছে না রাজধানীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। একিউআই জানায়, আগামী সাতদিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকার বায়ুদূষণের সূচক ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে ওঠানামা করবে। এর মধ্যে শুক্রবার ১০১ থেকে ১৫০, শনিবার ও রোববার ১৫০ থেকে ২০০, সোম ও মঙ্গলবার এই সূচক থাকবে গড়ে ১০১ থেকে ১৫০। প্রসঙ্গত, এয়ার ভিজু্যয়ালের করা বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। এর ওপরে রয়েছে আফগানিস্তানের কাবুল, ভারতের দিলিস্ন ও পাকিস্তানের লাহোর শহর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, '১০১ থেকে ১৫০ সূচক হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ১৫০-২০০ সূচক হলে সেটি অস্বাস্থ্যকর। আর সূচক যদি ২০০ থেকে ৩০০ হয় তাহলে সেটি খুবই অস্বাস্থ্যকর, ৩০০ ওপরে হলে সেটিকে আমরা দুর্যোগপূর্ণ বলি।' তিনি জানান, 'ঢাকায় গত দুই মাসে প্রায় দিনই সূচক ৩০০-এর ওপরে উঠেছে। দিনের কোনো না কোনো সময় সূচক ৩০০-এর ঘরে উঠে যায় আমাদের। নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে দশবার সূচক ৩০০-এর ওপরে ছিল, যা খুবই ভয়ঙ্কর। ঘণ্টা হিসেবে কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা এই অবস্থা ছিল বলে তিনি জানান।' জানা যায়, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা (পার্টিকেলস) অর্থাৎ পিএম ২.৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। কামরুজ্জামান বলেন, এ পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে রাস্তায় রাস্তায় পানি ঢালা। সরকারের তরফ থেকে পানি ঢালা হচ্ছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা ভবনে থাকেন তারা প্রত্যেকেই যদি নিজেদের ভবনের সামনে তিন বালতি করেও পানি ঢালেন তাহলে বায়ুদূষণের ছয় ধরনের অতি ক্ষুদ্রকণার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর পিএম ২.৫ কমে যাবে। ফলে শুধু সরকার নয়, সবার কাজ করতে হবে। তবে সেটি করতে হবে সমন্বিতভাবে। বায়ুদূষণ রোধে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, 'আমরা বায়ুদূষণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছি। আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প আছে সেগুলোকে পরিবেশবান্ধবভাবে ম্যানেজ করার জন্য কথা বলছি।' তিনি বলেন, বায়ুদূষণ একটি সমন্বিত বিষয়। শুধ সরকার বা জনগণ এটি করতে পারবে না। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি জানান, 'ঢাকার দূষণের একটি বড় কারণ চারপাশের ইটভাটাগুলো। আমরা গত এক মাসে ১৭৬টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ১৪৬টির মতো ভেঙে দিয়েছি। এ কাজ খুবই সময়সাপেক্ষ। কারণ এই অভিযানে শুধু অধিদপ্তরের লোকজন নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা লাগে। এসব একসঙ্গে করেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বায়ুদূষণ রোধে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এজন্য প্রত্যেকের নিজের এলাকা পরিষ্কার রাখা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।' বাংলা ট্রিবিউন।