ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসিত

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি গুরুতর অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত হবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। বিবিসি জানিয়েছে, আসছে জানুয়ারিতে সিনেটে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ট্রাম্পকে। শুনানি শেষে অপসারণের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়লে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে হবে ট্রাম্পকে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট এন্ড্‌রু জনসন এবং বিল ক্লিনটন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে কাউকেই সিনেট পদচু্যত করেনি। আর অভিশংসন ভোটের পর হোয়াইট \হহাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট আত্মবিশ্বাসী, সিনেটের বিচারে তিনি 'সম্পূর্ণ নির্দোষ' প্রমাণিত হবেন। ভোটাভুটি : বিবিসির খবরে বলা হয়, বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধিদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে, যারা এই প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে তা নিয়ে ভোটাভুটির দাবি তোলেন। এরপর সে বিষয়ে ভোটাভুটি হয় এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগের মেরিট নিয়ে দশ ঘণ্টা বিতর্ক চলে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুটো- ১. প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। ২. অভিশংসনের তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় ওই দুই অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে শুরু হয় ভোটাভুটি। দুটি অভিযোগেই ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয় দলীয় মতামতের ভোটে। ডেমোক্র্যাটদের প্রায় সবাই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা ভোট দেন বিপক্ষে। প্রথম অভিযোগ ২৩০-১৯৭ ভোটে এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ২২৯-১৯৮ ভোটে অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদ। যে যা বললেন : স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের বিতর্ক শুরু হয়। ডেমোক্র্যাট পেলোসি বলেন, 'শত শত বছর ধরে আমেরিকানরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রজাতন্ত্রের দর্শন আজ হোয়াইট হাউজের কর্মকান্ডে হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা যদি এখনই উদ্যোগী না হই, তাহলে তা হবে দায়িত্ব এড়ানো। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বহীন আচরণ আজ ইমপিচমেন্টকে জরুরি করে তুলেছে, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি আমাদের জন্য অন্য কোনো সুযোগ রাখেননি।' প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নাতি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধি জো কেনেডি বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে সরাসরি নিজের সন্তানদের নাম ধরে তাদের উদ্দেশে ব্যাখ্যা করেন, কেন তিনি ইমপিচমেন্টের পক্ষে। তিনি বলেন, 'প্রিয় এলি ও জেমস: এটা এমন এক মুহূর্ত, যার কথা তোমরা পরে ইতিহাসের বইতে পড়বে।' প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষমতাকে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের আনেন ম্যাসাচুসেটসের এই কংগ্রেস সদস্য। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ডো কলিন্স 'অবৈধভাবে পক্ষপাতমূলক' তদন্ত চালানোর অভিযোগ তোলেন ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে। তার ভাষায়, এই ইমপিচমেন্টর প্রস্তাব আগে থেকেই ঠিক করা। আর রিপাবলিকান ব্যারি লাউডারমিল্ক এই অভিশংসন প্রক্রিয়াকে তুলনা করেন যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসিফিকেশনের সঙ্গে। বিবিসি লিখেছে, ইমপিচমেন্টের চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকেই রাজপথে সরব ছিলেন ট্রাম্পবিরোধীরা। নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে মঙ্গলবার রাতে শত শত মানুষের জমায়েত থেকে সেস্নাগান দেওয়া হয়- 'আইনের ঊর্ধ্বে কে আছে? কেউ নয়, কেউ নয়'। অভিশংসন ভোট নিয়ে ট্রাম্পের বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া এদিকে নেতিবাচক পথে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস তৈরি করলেও সিনেটের রিপাবলিকানরা তাকে রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের নেতৃত্বে হওয়া অভিশংসন ভোটের নিন্দা করে ট্রাম্প এসব কথা বলেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিন ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ যখন তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিচ্ছে, তখন ট্রাম্প মিশিগানে একটি পুনর্র্নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশে ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে এই সমাবেশের সূচি ঠিক করা হয়েছিল, আর প্রতিনিধি পরিষদের ভোটের দিনই সমাবেশটি হয়। কয়েক হাজার হর্ষোৎফুলস্ন সমর্থকের সামনে ভাষণ দেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠার আগে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে ভোট শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। ভোট শুরু হওয়ার পর তিনি মঞ্চে উঠেন। এতে নাটকীয়ভাবে টেলিভিশনের স্ক্রিন ভাগ করে একদিকে প্রতিনিধি পরিষদের ভোট ও অন্যদিকে ট্রাম্পের ভাষণ দেখানো শুরু হয়। প্রতিনিধি পরিষদ যখন তাকে অভিশংসন করার পক্ষে ভোট দেয় তখনই সমাবেশে উপস্থিত আনন্দোচ্ছল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, 'এই স্বেচ্ছাচারী, দলীয় আনুগত্যের অভিশংসন ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যার মিছিল।' প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও ডেমোক্রেটরা নিজেদের 'চিরন্তন লজ্জার মধ্যে ফেলেছেন' এবং আগামী বছর কোটি কোটি জনতা প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণ উল্টে দেবে ও 'পেলোসির বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তাকে দপ্তর ছাড়া করবে' বলে মন্তব্য করেছে ট্রাম্প। 'তাদেরই অভিশংসন করা দরকার, তাদের প্রত্যেকের,' বলেন তিনি। অভিশংসন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এই সমাবেশেটি ট্রাম্পের জন্য সুবিধাজনক স্থান ছিল এবং তার বাগাড়ম্বর দ্রম্নত প্রচারের জন্য এটি উপযুক্ত স্থান ছিল বলে মন্তব্য রয়টার্সের। অভিশংসন সমাবেশে উপস্থিত তার সমর্থকদের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলেছে, এমন কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। প্রাণোচ্ছল সমর্থকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে সেস্নাগান দিচ্ছিল, 'আরও চার বছর!' অভিশংসনের ভোটটি পার্টি লাইন অনুসরণ করে হলেও এটি ইমেজ সচেতন ট্রাম্পের ওপর ছায়া ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মাত্র চার জনের একজন হয়ে উঠলেন, যাদের অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই চার জনের মধ্যে একমাত্র রিচার্ড নিক্সন প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন ভোটের আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে না বলে ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল। সিনেটে উঠলেই অভিশংসন প্রক্রিয়াটির 'মৃতু্য' হবে বলে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এই মিত্র।