রাজাকারমুক্ত আ'লীগ চায় বিরোধীরা

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আমন্ত্রণ পাওয়া থেকে বাদ পড়েনি নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোও। বেশির ভাগ দলের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছানোরও খবর পাওয়া গেছে। মহাজোটের বাইরে থাকা দলগুলোর অধিকাংশই সম্মেলনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়। তবে সফলতা কামনার পাশাপাশি দানব ও রাজাকারমুক্ত আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা করছে তারা। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের দিকে গোটা দেশবাসী তাকিয়ে আছে। অপেক্ষায় আছেন কারা নেতৃত্বে আসছেন তা দেখার জন্য। সম্প্রতি প্রকাশিত ও পরে স্থগিত হওয়া রাজাকার তালিকায় স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া এই রাজনৈতিক দলের অসংখ্য রাজাকারের অনুপ্রবেশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসে কিনা তা নিয়ে কৌতূহলী সাধারণ মানুষ। তালিকা অনুযায়ী দলটি রাজাকারনির্ভর হয়ে গেছে বলেও বিভিন্ন মহলের আলোচনা আছে। তালিকাটি স্থগিত হলেও সমালোচনা থেমে নেই। আর বিরোধী রাজনৈতিকগুলো দেশের এই প্রবীণ রাজনৈতিক দলের সফলতা কামনার পাশাপাশি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া দলটি রাজাকারনির্ভরতা কাটিয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে সম্মেলনের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ দাওয়াতপত্র দিয়ে আসেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাসকে দাওয়াত করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, শুক্রবার গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন আছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন, সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনও উদ্বোধন হবে বেলা ৩টায়। তাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি কেউ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। বিএনপি যাবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি এখনো কিছু জানেন না। দলের সিদ্ধান্তের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। তবে সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন তিনি। একই বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি যাওয়ার না যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির প্রত্যাশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে সেখান থেকে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিলে যে আওয়ামী লীগের জন্য ভালো হবে তা উপলব্ধি করুক। তারা যে গণবিরোধী অবস্থান নিয়ে আছে তা থেকে বের না হলে খেসারত দিকে হবে তা বুঝুক। এ ছাড়া রাজাকারের যে তালিকা দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তার মানে এমন বিষয়টি বের হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদী দল। সুবিধাবাদী মানুষ সেখানে ভিড় করেছে। স্থগিত হওয়া যে তালিকা করেছে তাতে ভালো কোনো উদ্দেশ্য বা শুভ বুদ্ধি নেই বলা যায়। সব মিলে সম্মেলনে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আওয়ামী লীগে তা প্রত্যাশা করে বিএনপি। এ ছাড়া অন্য মহাজোটের বাইরে আমন্ত্রণ পাওয়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত যেমন আছে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও রয়েছে। এ বিষয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাওয়াত পেয়েছেন। যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সম্মেলনে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু গণফোরাম নয় জাতি প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ অতীতে যে ভুল ভ্রান্তি করেছে, কলঙ্কের যত তিলক লেগেছে সেখান থেকে তারা মুক্ত হবে। এ ছাড়া স্থগিত হওয়া তালিকা অনুযায়ী আওয়ামী লীগে অনেক রাজাকার আছে, অনেক রাজাকারের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় দানবের তথ্যও পাওয়া যায়। এজন্য সম্মেলনে প্রত্যাশা হচ্ছে দানবমুক্ত ও রাজাকারমুক্ত হয়ে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক আওয়ামী লীগের যে ঐতিহ্য সেই ধারায় ফিরে আসুক। এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মো. শাহ আলম দাওয়াত পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, তারা সম্ভবত যাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের আরেক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি দাওয়াতের বিষয়টি নিয়ে এখনো কিছু জানেন না। তবে পেলে যাবেন কি না প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আওয়ামী লীগের নিয়মিত সম্মেলন হচ্ছে, সেটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সে সম্মেলনে বিরোধী দলগুলোর যাওয়ার মতো বাস্তবতা নেই। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দাওয়াতপত্র পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, এখনো কিছু ভাবেননি। অন্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন।