নিয়ম ভেঙে আগেই বসছে কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

ফয়সাল খান
জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ছবিটি ঢাকার শনিরআখড়া থেকে তোলা Ñফাইল ছবি
রাজধানীতে নিয়ম ভেঙে নিধাির্রত সময়ের আগেই বসছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ হাটেই এরই মধ্যে বঁাশের খুঁটি, গেট ও তোরণ নিমাের্ণর কাজ শেষ হয়েছে। কোনো কোনো হাটে বেপারিরা বেশকিছু গরুও এনে জড়ো করেছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ঈদের ৬ দিন আগে প্রস্তুতি শুরু করার কথা। ঈদের দিনসহ মোট ৪ দিনের জন্য এখন পযর্ন্ত ১৫টি হাটের ইজারা দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এছাড়া ৮টি হাটের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। অথচ সেগুলোতেও গরু বেচাকেনার প্রস্তুতির পবর্ শেষ পযাের্য়। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দাবি, এখন পযর্ন্ত হাটে কাজ করার কোনো অনুমোদন ইজারাদারদের দেয়া হয়নি। ঈদের ৬/৭ দিন আগ থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে পারবে তারা। নিয়ম অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে ঈদের দিন পযর্ন্ত অস্থায়ী হাটগুলো বসবে। আর এর দুই দিন আগে অথার্ৎ ১৭ আগস্ট থেকে প্রস্তুতি শুরু করবে। এমন শতের্ই অস্থায়ী পশুর হাটগুলো বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই শতর্ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ খান মোহাম্মদ বেলাল যায়যায়দিনকে বলেন, নিদির্ষ্ট স্থানে ঈদের দিনসহ মোট চারদিন অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি পাবেন। এর দু’দিন আগে হাটের প্রস্তুতি নিতে পারবেন। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কমর্কতার্ আমিনুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী ছাড়া কোনো হাটে এখনো কোরবানির পশু উঠেনি। অস্থায়ী হাট প্রস্তুত করার জন্যও কাউকে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে ঈদ যেহেতু কাছে চলে এসেছে, কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। তবে হাটের কারণে যদি জনসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তবে নাম প্রকাশ না করার শতের্ কয়েকজন কমর্কতার্ জানিয়েছেন, হাটের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় প্রয়োজন। দুই দিনে কেউ হাট প্রস্তুত করতে পারে না। তাই নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের ন্যায় নিয়ম না মেনে অন্তত দুই সপ্তাহ আগ থেকে হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ইজারাদাররা। এরই মধ্যে কোনো কোনো হাটের প্রস্তুতি নিধাির্রত সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক-মহাসড়কের পাশে খুঁটি লাগানো হচ্ছে। কাউন্টার স্থাপন, প্রচারণা, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য কাজও শেষ পযাের্য়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারিরা কোরবানির পশু নিয়ে আসা শুরু করেছেন। এ বিষয়ে একাধিক ইজারাদার জানান, একটি হাট প্রস্তুত করা অনেক কঠিন ব্যাপার। হাটের প্রস্তুতি না থাকলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুরু ব্যবসায়ীরা আসবে না। সিটি করপোরেশনের অনুমোদন না থাকা সত্তে¡ও ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের উন্নত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে আগেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তারা। জানা গেছে, আগামী ২২ আগস্ট বুধবার অনুষ্ঠিত মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধমীর্য় উৎসব ঈদুল আজহা। এদিন ধমর্প্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবাই করবেন। তাই এটিকে অনেকেই কোরবানির ঈদও বলে থাকেন। নগরবাসীর কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে প্রতি বছরই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী হাট বসানো হয়। তবে এসব হাট বসানোর ক্ষেত্রে বরাবরই নিয়মনীতি মানা হয় না। এর ফলে ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে সীমাহীন যানজট তৈরি হয়। নিয়ম অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে অস্থায়ী পশুর হাট শুরু করার কথা। আর প্রস্তুতির কাজ শুরু করার কথা ১৭ আগস্ট থেকে। তবে সরেজমিন ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে তেজগঁাও অস্থায়ী পশুর হাট। এদিন থেকে গরু আসা শুরু করবে। আর ১৬ আগস্ট শুরু হবে কেনাবেচা। এমনটাই জানিয়েছেন হাট সংশ্লিষ্টরা। হাটে খুঁটি লাগানোসহ অন্যান্য কাজ চলছে সপ্তাহখানেক আগ থেকেই। শুধু এই হাটই নয়, রাজধানীতে প্রায় জায়গাতেই নিধাির্রত সময়ের আগে অস্থায়ী পশুর হাট বাসনোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পযাের্য়। মেরিদিয়া হাটে এরই মধ্যে গুরু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটের নিধাির্রত এলাকা ছাড়িয়ে নন্দীপাড়া বালুর মাঠেও খুঁটি লাগানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে পুরো মাঠে বঁাশ, খুঁটি ও তাঁবু দিয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজও শেষ হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেরাদিয়া অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার হাজী শাহ আলম বলেন, বালুর মাঠে প্রস্তুতি নেয়ায় জনসাধারণের কোনো সমস্যা হবে না। এটা উন্মুক্ত জায়গা দেখে সেখানে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। তাই তাদের সুবিধাথের্ এটা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে এখনও হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়নি এরপরও কেন হাট বসানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অনুমতি দেয়নি ঠিকই, কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য তো আমার কিছু করতে হয়।’ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে ইজারাকৃত অস্থায়ী পশুর হাটেও কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। বঁাশের খুঁটিসহ আনুষঙ্গিক কাজও প্রায় শেষ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটটির ইজারাদার শফি মাহমুদ বলেন, খামারিরা কিছু পশু এনে রেখেছেন। এখনো কেনাবেচা শুরু হয়নি। ১৬ আগস্ট থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বুড়িগঙ্গার পাড় পযর্ন্ত হাটটির প্রস্তুতিও একই অবস্থা। তবে এখনে কোনো পশু উঠেনি। হাটটির ইজারাদর আবুল হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন থেকে এখনো গরু উঠানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই অন্য প্রস্তুতির কাজগুলো শেষ করছেন তিনি। ব্রাদাসর্ ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গায় পশুর হাট বসানোর জোর প্রস্তুতি চলছে। হাটের প্রধান দুই প্রবেশ গেটে দুটি বড় তোরণ নিমার্ণ করা হয়েছে। শ্রমিকরা সারি সারি করে বঁাশের খুঁটি ও তাঁবু স্থাপনের কাজ করছেন। বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।