ধর্ষককে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি

ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফুঁসছে দেশ

শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। সোচ্চার হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:১৩

অনলাইন ডেস্ক
ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় মঙ্গলবারও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো ক্যাম্পাস। ছবিতে বিভিন্ন পস্ন্যাকার্ড হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন -যাযাদি

যাযাদি ডেস্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ। ঢাকা সেনানিবাসের কাছে কুর্মিটোলায় রোববার রাতে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে মঙ্গলবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে মঙ্গলবারও শামিল হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছেন। প্রতিবাদী এসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের মূর্তিগুলোর চোখেও কালো কাপড় বেঁধে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দিনভর নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাত থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কাল সোমবার সকাল থেকে দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও শাহবাগে প্রতিবাদী মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষণকারীকে দ্রম্নত খুঁজে বের করার ও বিচারের দাবি জানান। বিকেলে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থলে যান। তারা অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন এবং সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নেন। আধা ঘণ্টা পর তারা অবরোধ তুলে নেন। রাতে মোমবাতি জ্বেলে ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। মঙ্গলবার সকালে বুকে পস্ন্যাকার্ড নিয়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। তারা রাজু ভাস্কর্যের মূর্তির চোখেও বেঁধে দেন কালো কাপড়। শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। রোকেয়া হলের সামনের সড়কে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হয়েছে এই চিত্রাঙ্কন। তারা অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে দ্রম্নত গ্রেপ্তারের দাবিতে স্স্নোগান দেন। ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে রোববার রাত থেকেই চার শিক্ষার্থী অনশন করছেন। মঙ্গলবার ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মীরা মধুর ক্যানটিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে টিএসসিতে মিছিলও করেছে ছাত্রদল। ধর্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ধর্ষকের কুশপুত্তলিকা তৈরি করে তা পোড়ান। মানববন্ধন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, 'পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে দেশে নারী নির্যাতন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এখন উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়ন মানে শুধু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না। মানুষের জীবনের নিরাপত্তার উন্নয়ন না হলে কিসের উন্নয়ন? আমরা এই ধর্ষণের ঘটনার এমন বিচার চাই, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। শুধু এই ঘটনায় আমাদের প্রতিবাদ থেমে থাকলে চলবে না। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনায় রাস্তায় নামতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে।' 'হ্যাং দ্য রেপিস্ট' দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্দোলন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে সহপাঠীর ধর্ষণের বিচার চেয়েছেন। এসময় তাদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ও হাতে ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে। একই দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের আশপাশে অনেক শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্নভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। 'ধর্ষকের বিচার চাই', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস', 'হ্যাং দ্য রেপিস্ট (ধর্ষককে ফাঁসি দাও)', 'এই ধর্ষণ উপত্যকা আমার দেশ নয়' লেখাসংবলিত পস্ন্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন তারা। ঢাবির বেগম রোকেয়া হলের সামনের সড়কে প্রতিবাদী আলপনা এঁকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হলের শিক্ষার্থীরা 'বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিবর্তনের' পক্ষে স্স্নোগান দিয়েছেন। প্রতিবাদে রাস্তায় জাবি ছাত্রলীগ রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বর থেকে শাখা ছাত্রলীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে মানববন্ধনে মিলিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, যারা এই কাজ করেছে তারা মানুষ নয়, তারা মানুষরূপী পশু। এদেরকে দ্রম্নত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। আর কেউ যেন ধর্ষণের মতো কুকর্মের ধৃষ্টতা না দেখায় এজন্য এদের শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। 'জড়িতের শাস্তি হওয়া উচিত' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দ্রম্নত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ওই শিক্ষার্থীকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দেখতে এসে তিনি এই দাবি জানান। এর আগে মানবাধিকার কমিশন হাসপাতালে মেয়েটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। পরে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় তিনি বলেন, মেয়েটিকে দেখেছি, তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মেয়েটি জানিয়েছেন আসামিকে দেখলে চিনতে পারবেন। আসামি দেখতে মাঝারি গঠন এবং বাকি সবকিছুই কেমন দেখতে সবকিছু তা বলতে পারবেন। অভিজ্ঞ চিত্রশিল্পীর মাধ্যমে আসামির ছবি আঁকিয়ে তাকে শনাক্ত করা হবে। মেয়েটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান তাই ধর্ষণের আলামত নষ্ট হতে দেয়নি। তার ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আলামতগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করি, ছবি আঁকিয়ে এবং ভিকটিম ও আসামির ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করতে অসুবিধা হবে না। মানবাধিকার কমিশন বলেন, 'আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। মেয়েরা কি এতই সহজ যে, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই যৌন সহিংসতার শিকার হবে। এখানে ওসিসিতে পুলিশ, ডাক্তার ও অ্যাডভোকেট আছেন, মেয়েটিকে সব ধরনের সহায়তা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এখানে মেয়েটির ছাড়াও আরও ভিকটিম রয়েছে। তাদের সবার মামলার মনিটরিং এবং এর বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মনিটরিং করব।' প্রতিবেদন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলার এজাহার গ্রহণ করেছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা মামলার এজাহারটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এর আগে রোববার রাতেই ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। প্রাথমিক তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে দুপুরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফুটেজ পেয়েছে পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী যে স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সেই স্থানের আশপাশের কিছু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, তারা আশা করছেন দ্রম্নতই ধর্ষক গ্রেপ্তার হবে। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসে ডিসি সুদীপ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সবার একটাই লক্ষ্য, ধর্ষককে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা। সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রণালয় রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই ছাত্রীর নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃবতে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার যখন নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তখন এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। তার নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা এ মন্ত্রণালয় হতে প্রদান করা হচ্ছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এবারও ভালো করেছে সাউথ 
পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ 
বিগত বছরগুলোর মতো প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা ২০১৯-এ ভালো ফলাফল করেছে ‘সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। 
এই দুই পরীক্ষায় সাউথ পয়েন্টের পরীক্ষার্থী ছিল-১৩৫৪ জন, তন্মধ্যে শতভাগ পাসসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৫৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর শতকরা ৬৩ ভাগ। হ্যান্ডনোট, সাজেশন ও মুখস্থনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠভ্যাস তথা চর্চা গড়ে তোলার ফলে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবদি বোর্ডসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার রেকর্ড নেই। প্রতি বছরই শতভাগ পাস। উল্লেখ্য, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও উদ্যোক্তাÑ প্রকৌশলী এম এ রশিদ ও অধ্যক্ষ হামিদা আলী প্রতিষ্ঠা করেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২০০২ সালে মাত্র ২০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন প্রায় ১২০০০ ছাত্রছাত্রী এখানে পড়ালেখা করছে। বিজ্ঞপ্তি