জবি প্রক্টরের নিয়োগ ও পিএইচডি জালিয়াতি

সাংবাদিকদের মূর্খ বলায় ক্ষোভ, তদন্তের দাবি

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:২৬

জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রক্টর মোস্তফা কামালের নিয়োগ ও পিএইচডি জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের মূর্খ বললেন উপাচার্য। আর মোস্তফা কামালের পিএইচডি জালিয়াতির সংবাদকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে দৈনিক যুগান্তর, ইনকিলাব পত্রিকা ক্যাম্পাসে পুড়িয়েছে ওই প্রক্টরের অনুসারী জবি ছাত্রলীগের একাংশ ও জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জমান আসাদের অনুসারীরা। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল করে রফিক ভবনের সামনে পত্রিকা পোড়ায় তারা। এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টরের নিয়োগ ও পিএইচডি ডিগ্রির অনিয়মে প্রশাসনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জরুরি তদন্তের দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ঐক্যজোট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আর জালিয়াতকারীর পক্ষ নিয়ে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের সাংবাদিকদের মুর্খ বলায় প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন জানেন না এমন মূর্খ সাংবাদিকরাই এ ধরনের সংবাদ লিখতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির নিয়ম নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের নিয়ম ছিল যদি কোনো বিভাগের শিক্ষক ওই বিভাগেই পিএইচডি করেন তবে তিনি ২ বছর পরেই পিএইচডি জমা দিতে পারবেন। সে নিয়ম অনুসারে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামকে পিএইডি প্রদান করা হয় ৩৭তম একাডেমিক কাউন্সিলে। এর ১ বছর পর একই নিয়মে মোস্তফা কামালকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ নিয়মটি শুধুমাত্র ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের জন্যই প্রযোজ্য। তা ছাড়া বর্তমান প্রক্টর মোস্তফা কামালকে পিএইচডি দেয়া হয়েছে ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিলে। সুতরাং তার পিএইচডি যাবতীয় নিয়ম মেনেই দেয়া হয়েছে। জবি ছাত্রলীগের একাংশ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জমান আসাদের অনুসারীরা বলেন, যুগান্তর ও ইনকিলাব পত্রিকাকে তারা জামাত ও বিএনপির এজেন্ট বলে দাবি করেন। তাদের অবস্থান প্রগতিশীল চিন্তার বিরুদ্ধে, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। বিবৃতিতে প্রগতিশীল ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের প্রেক্ষিতে কোনো রকম স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়নি। উপরন্তু উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জবি সাংবাদিক সমিতির এক প্রতিবাদ বার্তায় সাংবাদিক সমিতির সভাপতির হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান তার নিয়োগ ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানে অনিয়মের তদন্ত না করেই তার পক্ষে সাফাই গেয়ে উল্টো সাংবাদিকদের মূর্খ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে উপাচার্যের এ বক্তব্যে সাংবাদিক সমাজ হতাশ এবং যা কোনোভাবেই আশা করে না। পিএইচডি নীতিমালার ২ এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য পিএইচডি করতে হলে নূ্যনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে নূ্যনতম ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। কিন্তু মোস্তফা কামালের সার্টিফিকেট থেকে দেখা যায় যে তার স্নাতক পর্যায়ে তার ফলাফল ২য় শ্রেণি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ফলাফলে তার অবস্থান ৯০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯তম। আর তার প্রাপ্ত নম্বর মোট নাম্বারের ৪৬ শতাংশ। সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিলে মোস্তফা কামালের পিএইচডি থিসিস উত্থাপন হলে একাধিক ডিন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তার বিরোধিতা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতাবলে ৩ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেয়ার নিয়ম সংশোধন করে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ২ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেয়ার নিয়ম করেন। পরে ওই একাডেমিক কাউন্সিলে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়, যা ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৭১তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনুমোদন দেয়া হয়।