পুঁজিবাজারে ধস উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর ৬ নির্দেশনা

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:২৮

যাযাদি রিপোর্ট
আবারও বড় ধসের কবলে পড়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই বৈঠক থেকে পুঁজিবাজারের এই অবস্থার উত্তরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান রাতে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কতিপয় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়। স্বল্প মেয়াদি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক দশকের মাথায় ফের আরও একটি বড় ধসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার, গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের প্রধান সূচক আবার নেমে এসেছিল ভিত্তি পয়েন্টেরও নিচে। ওই দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএঙ্ ৮৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্ট হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে যখন ডিএসইএঙ্ চালু হয়েছিল, তখন এ সূচকের ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। নতুন বছরের প্রথম আট দিনেই ডিএসইএঙ্ ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে। দরপতনের ধাক্কায় এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকা। শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত যেখানে নেমেছে, ততটা খারাপ দশা আর কখনো ছিল না। বাজারের এই করুণ দশায় ফের রাস্তায় নেমেছেন ছোট বিনিয়োগকারীরা। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তারা মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন। বুধবার জাতীয় সংসদে বক্তব্যে ধসের কবল থেকে পুঁজিবাজারকে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তার পরদিনই গতকাল সংশ্লিষ্টদের নিজের কার্যালয়ে ডেকে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তার নির্দেশনাগুলো হলো-পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা; মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কতিপয় সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা; আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ; বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা; বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে সভায় আলোচনা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াবে চার ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার বিকালে বৈঠকে বসেন এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। সেখানে পুঁজিবাজারে ব্যাংক চারটির বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে সোনালী ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি ত্রৈমাসিকে চেয়ারম্যান ও এমডিদের মধ্যে আলোচনা সভার ধারাবাহিক পরিক্রমায় বৃহস্পতিবার মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পর্ষদ কক্ষে চার ব্যাংকের মধ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্য নিয়মিত বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়। 'সভায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে সবাই ইতিবাচক মতামত প্রদান করেন এবং সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।' মেয়র নাছিরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মোছলেম এদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে জয় পাওয়ার পর চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দীন আহমেদ। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তারা। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় মোছলেম উদ্দীন আহমদকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ উপনির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেছেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয় যে নিশ্চিত হয়, এটাই তার প্রমাণ। সৌজন্য সাক্ষাৎকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি উপস্থিত ছিলেন।