শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট পেছানোর দাবিতে অনশনে অসুস্থ চার ঢাবি ছাত্র

অঞ্জলি দেওয়ার ঘোষণা হিন্দু মহাজোটের
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
সরস্বতী পূজার দিনে সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুক্রবারও আমরণ অনশন করেন শিক্ষার্থীরা -যাযাদি

সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকার সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিনে চার ছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অর্ক সাহা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তীকে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস জানিয়েছেন। এছাড়া জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজল দাস ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রদীপ দাস অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, আরও অনেকেই অসুস্থ। কিন্তু সবাই হাসপাতালে যেতে রাজি নয়। জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের জিএস কাজল দাসের শরীরে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

'এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য অহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছে। সব ধর্মের শিক্ষার্থীরাই একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।'

নির্বাচন কমিশন 'সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত' পরিবর্তন না করা পর্যন্ত অনশন চলবে বলে ঘোষণা দেন উৎপল।

অনশনস্থলে অসুস্থ কাজল বলেন, 'আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে যাব না, এখানেই থাকব।'

২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব সরস্বতী পূজা। এর মধ্যে ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।

ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য এক আইনজীবীর করা রিট আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেলেও তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ কয়েকটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, রাতে সেখানেই তাঁবু টাঙিয়ে ছিলেন তারা।

শুক্রবার বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনশনস্থলে জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দেওয়া শুরু করে। তারা পূজার তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন স্স্নোগান দেন।

রাজপথে অঞ্জলি দেওয়ার

ঘোষণা হিন্দু মহাজোটের

\হএদিকে নির্বাচন কমিশন সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

সংগঠনটি বলছে, তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারিই যদি ভোটের আয়োজন হয়, তাহলে সেদিন সকাল ৮টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরস্বতী পূজা করে রাজপথে অঞ্জলি নিয়ে কালো পতাকা মিছিল করবে তারা।

পূজার দিনে ভোটের তারিখ রাখার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন হিন্দু সম্প্রদায়ের 'আস্থা হারিয়েছে' বলেও মন্তব্য করেছেন হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে।

শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমরা ৩০ জানুয়ারির ঢাকা সিটির ভোট বর্জন করছি। কোনো হিন্দু ভাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। কোনো প্রচারে অংশ নেবেন না।

'আমরা ৩০ তারিখ সকাল ৮টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঘটপূজা করে রাজপথে অঞ্জলি নেব এবং কালো পতাকা মিছিল করব।'

ভোটের তারিখ পেছানোর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী অনশনে বসেছেন। এ বিষয়ে এক আইনজীবীর করা রিট হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেলেও তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন।

আর নির্বাচন কমিশন বলে আসছে, পূজা ও ভোট দুটোই পবিত্র, একসঙ্গে হলে কোনো সমস্যা তারা দেখছে না।

এই ভূমিকার কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারানোর কথা জানিয়ে হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র বলেন, 'যারা একটি গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়, তারা সাংবিধানিক কোনো পদে থাকতে পারে না। এই কমিশনের প্রতি আমাদের আর আস্থা নেই। আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছি।

'আমরা সকল রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের অনুরোধ করছি আমাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য।'

এই কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট আশা করা যায় না মন্তব্য করে পলাশ বলেন, 'যারা একটি বৃহৎ সম্প্রদায়কে ভোট দান থেকে বিরত রাখতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য ভালো না, তারা মুজিববর্ষের বাংলাদেশকে বিতর্কিত করতে চায়।'

'ইসি কেন হার্ডলাইনে'

৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার দাবি তুলে হিন্দু মহাজোটের সমন্বয়কারী শ্যামল কুমার রায় বলেন, '১০ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপর ১৫ দিন প্রচারের সময় তো আছে। এ সময় পার হওয়ার পর ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ যেকোনো দিন নির্বাচন করা যায়।

'সুতরাং নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা যেতে পারে, কিন্তু পূজার তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব না।'

নির্বাচন কমিশনের এই অনড় অবস্থান কেন- সেই প্রশ্ন তুলে শ্যামল কুমার বলেন, 'নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। মেয়র প্রার্থী সকলেই তারিখ পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেছেন। সেতুমন্ত্রীও বলেছেন। এখন যেখানে শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের ব্যাপার।

'এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এত হার্ডলাইনে কেন? নির্বাচনের তারিখ কী আসমানি বিধান নাকি যে ওই তারিখেই হতে হবে। অবশ্যই পরিবর্তন করা যাবে।'

নির্বাচন কমিশন পূজার দিনে ভোটের আয়োজন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে কিনা- সেই সন্দেহ প্রকাশ করে হিন্দু মহাজোটের এই নেতা বলেন, 'অতীতের নির্বাচন কমিশনের মতো এই নির্বাচন কমিশনের ভেতরেও গলদ রয়েছে নাকি? যে দলের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছেন সেই দলে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এরা কারা?

'দেশের স্বাধীনতার পেছনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবদানকে যারা খাটো করে, সে সমস্ত চিন্তা-চেতনাকারীরাই এই ধরনের তারিখ দিতে পারে।'

পূজার দিনে ভোটের তারিখ রাখার মধ্যে দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনকে 'কলুষিত করার চেষ্টা' চলছে বলে অভিযোগ করেন মহাজোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রভাস চন্দ্র মন্ডল।

নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, 'দেশে দুই থেকে আড়াই কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আছে। এমন তারিখ দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবমাননা করা হয়েছে। এই তারিখ পরিবর্তন না করা হলে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি আসবে।'

অন্যদের মধ্যে হিন্দু মহাজোটের সহসভাপতি ডিসি রায়, রণজিত মৃধা, যুগ্ম মহাসচিব সমীর সরকার, অখিল মন্ডল, ফণিভূষণ হালদারস সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84876 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1