গবেষণার ফলাফল

পস্নাস্টিক দূষণের শীর্ষে দেশের তরুণ-যুবকরা

একবার ভাবুন তো, সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার জীবনে পস্নাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কতটা ব্যাপক

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে দেশটির তরুণ এবং যুব জনগোষ্ঠী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পস্নাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একবার ব্যবহার করা হয় এমন সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক পণ্য বেশি ব্যবহার করে। গবেষণার এই ফলাফল এমন একসময়ে পাওয়া গেল যখন সারাবিশ্বে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক পণ্য ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে সার্বিকভাবে পস্নাস্টিকের ব্যবহার একেবারে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে। পস্নাস্টিকের ব্যবহার : একবার ভাবুন তো, সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার জীবনে পস্নাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কতটা ব্যাপক। সকালে উঠে যে ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছেন এবং যে টিউব থেকে টুথপেস্ট আসছে, তার সবকিছুই পস্নাস্টিকের তৈরি। এছাড়া দিনে প্রতিটি খাবার এবং জীবনযাত্রায় পস্নাস্টিক পণ্য এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পস্নাস্টিক যেহেতু পচনশীল নয়, তাই ব্যবহারের পর যেসব পস্নাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া হয়, তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একইভাবে পরিবেশে টিকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক গবেষণায় বলেছে, মুদি দোকান থেকে কেনা পণ্য বহন করার জন্য যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব পস্নাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর ডায়াপার এবং পস্নাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না। তরুণ-যুবকরা সবচেয়ে বেশি পস্নাস্টিক দূষণ করছে : বাংলাদেশে পস্নাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ওই গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ এবং যুবকরাই পরিবেশে পস্নাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। যেসব খাবারের সঙ্গে পস্নাস্টিকের প্যাকেট রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে তরুণ এবং যুবকরা- যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। যেসব পস্নাস্টিক পণ্য একবার ব্যবহারের পর আর কোনো কাজে লাগে না, সেগুলোই পরিচিত সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক হিসেবে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যত সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের ব্যবহার হয়, তার ৩৫ শতাংশ ব্যবহার করে ১৫-২৫ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী আর এ ধরনের পস্নাস্টিকের ৩৩ শতাংশ ব্যবহার করে ২৬-৩৫ বছর বয়সিরা। অর্থাৎ বাংলাদেশে তরুণ এবং যুবকরাই সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী, কারণ মোট সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের ৬৮ শতাংশ ব্যবহার করছে এ জনগোষ্ঠী। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেট বিভাগীয় শহরে ১২০০ মানুষের ওপর তারা জরিপটি চালান। এছাড়া ২০১৯ সালে জরিপ চালানো হয়েছে ৮০০ জনের ওপর। এর মধ্যে ছিলেন পস্নাস্টিক উৎপাদক, খুচরা বিক্রেতা এবং পস্নাস্টিক ব্যবহারকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর যে পরিমাণ বর্জ্য হয়, তার ৮৭ হাজার টনই হচ্ছে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক। এসব পস্নাস্টিক রি-সাইকেল করা যায় না। ফলে এগুলোর জায়গা হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পরিবেশের ওপর পস্নাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যবহারকারীদের কোনো ধারণাই নেই। তবে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী বলেছেন, সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের বিকল্প দেওয়া হলে তারা সেটি গ্রহণ করতে রাজি আছেন। হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে পস্নাস্টিক বর্জ্য আসছে বেশি : শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আবর্জনার মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের পরিমাণ ছিল মাত্র তিন শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ শতাংশে। জরিপে দেখা গেছে, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, এয়ারলাইন্স এবং সুপারশপ থেকে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক সবচেয়ে বেশি আসছে। এর মধ্যে বেশি আসে রেস্টুরেন্ট থেকে। এরপর রয়েছে এয়ারলাইন্স এবং আবাসিক হোটেল। আবাসিক হোটেল থেকে যেসব পস্নাস্টিক বর্জ্য আসে সেগুলো হচ্ছে- শ্যাম্পুর বোতল ও মিনি-প্যাক, কন্ডিশনার প্যাকেট, টুথপেস্ট টিউব, পস্নাস্টিক টুথব্রাশ, টি-ব্যাগ এবং বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট। এয়ারলাইন্স থেকে আসে পস্নাস্টিকের চামচ, স্ট্র, পেস্নট, কাপ, গস্নাস এবং আরও নানা ধরনের পস্নাস্টিকের মোড়ক। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী এক বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন মনে করেন, সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিক থেকে সরে আসার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। যেসব পণ্যের জন্য পস্নাস্টিকের ব্যবহার একেবারেই আবশ্যক নয়, সেগুলো এখনই বন্ধ করা যেতে পারে বলে তিনি মত দেন। আর যেসব পণ্যের জন্য কিছু সময় প্রয়োজন সেগুলো ধাপে ধাপে ব্যবহার বন্ধ করা যেতে পারে বলে শাহরিয়ার হোসেন উলেস্নখ করেন।