৩০ ঘণ্টা লড়াই করে হেরে গেল সেই নবজাতক

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আবদুল হালিমের স্ত্রী জিনিয়া খাতুন রোববার সকালে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যান ব্যথার সমস্যা নিয়ে। এ সময় তিনি ২৫ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ক্লিনিকে তিনি যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন সেই চিকিৎসক জিন্নাতুল আরা। তিনি বলেন, 'মাত্র ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি ছিল। তবে অনেক ব্যথা আর ফ্লুয়িড বের হচ্ছিল। এ অবস্থায় আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সির কথা ভেবে আমরা সিজার করতে রাজি হইনি। পরে নরমাল ডেলিভারি হয় সোমবার ভোর ৪টার দিকে।' তিনি আরও বলেন, শিশুটির যখন জন্ম হয় তখন তার ওজন ছিল মাত্র ৬০০ গ্রাম এবং তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। 'দেখে মনে হচ্ছিল বাচ্চাটি জীবিত নেই। এটি দেখেই তার স্বজনরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তবে আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখি ও প্রায় আধা ঘণ্টা পর তার সাড়া পাই।' জিন্নাতুল আরা বলেন, 'এরপর মায়ের সংস্পর্শে দেওয়াসহ প্রাথমিক সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর তার সাড়া মেলে। এরপর দ্রম্নত তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় এবং তিনি দ্রম্নততার সঙ্গে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।' সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আসাদুর রহমান মানিক ৮/৯টার দিকে শিশুটিকে হাতে পান। তিনি বলেন, 'তখন তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল ছিল। শ্বাস নিচ্ছিল না, তবে হার্টবিট ছিল। দ্রম্নততার সঙ্গে আমরা এখানে যতটুকু ব্যবস্থা আছে তার সবটুকুই নিই।' তিনি আরও বলেন, এরপর বাচ্চাটিকে ইনকিউবিটরে দেওয়া হয় এবং আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 'এক পর্যায়ে বাচ্চাটি নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে; কিন্তু তার জন্য আরও ভালো চিকিৎসা সুবিধা দরকার ছিল বিধায় আমরা রাজশাহীতে রেফার করি। তবে তার অভিভাবকরা রাতে তাতে নিতে রাজি হয়নি।' ডা. রহমান জানান, মঙ্গলবার সকালে এসে তিনি আবার শিশুটির অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে দ্রম্নত রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই চিকিৎসক বলেন, 'পরে শুনলাম বাচ্চাটির অভিভাবকরা হাসপাতালে না নিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে এবং সেখানেই দুপুরে তার মৃতু্য হয়েছে। তবে এটি ঠিক যে, শিশুটির অবস্থা খুবই জটিল ছিল। এ ধরনের শিশুর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় উপকরণ চুয়াডাঙ্গায় নেই বলেই আমরা রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।' শিশুটির বাবা আবদুল হালিম জানান, শিশুটি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই দেখেই তিনি তার নিজের সিদ্ধান্তেই তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, বাঁচার ৯০ ভাগ সম্ভাবনা ছিল না। আর টাকা-পয়সার বিষয় ছিল। তাই ভাবলাম আগে বাড়ি নিই।' শিশুটির চাচা বরকত উলস্নাহ বলেন, 'তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেওয়ার কথা বলা হলেও অর্থনৈতিক কারণে তারা চেয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা হোক।' শেষ পর্যন্ত হাজারহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার পর বেলা ১টার দিকে মৃতু্য হয় সোমবার ভোরে জন্ম নেওয়া শিশুটির। বিবিসি বাংলা