সতর্ক বাংলাদেশও

চীনের রহস্যময় ভাইরাসে এশিয়ার বাজারে উদ্বেগ

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চতুর্থ ব্যক্তির মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে চীন। গত কয়েক দিনে উহান শহর থেকে উদ্ভূত এ ভাইরাসটিতে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকার খবরে এশিয়ার বাজারগুলোতে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। রোববার ভাইরাসটিতে আক্রান্ত আরেক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে বলে মঙ্গলবার উহানের পৌর স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে চার জনের মৃতু্য হলো। করোনারি হৃদরোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ৮৯ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির শরীরে গত ১৩ জানুয়ারি করোনাভাইরাসটির লক্ষণ ধরা পড়ে; তার পাঁচ দিন পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, জানিয়েছে তারা। চীনা নববর্ষের ছুটি উপলক্ষে দেশটির কোটি কোটি নাগরিক এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণের প্রস্তুতি নেওয়ায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শুক্রবার থেকে চীনে নববর্ষের ছুটি শুরু হচ্ছে। ভাইরাসটি ছোঁয়াচে- জানার পর থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো নতুন এ করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার গতি বাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য-বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির সংক্রমণের সঙ্গে ২০০২-০৩ সালের দিকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপারেটরি সিনড্রোমের (সার্স) সাদৃশ্য রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ায় তার ছাপ এশিয়ার শেয়ারবাজারেও পড়ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। চীন থেকেই উদ্ভূত করোনাভাইসার পরিবারের সার্স বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০ লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। নতুন এ 'উহান ভাইরাসের' প্রভাবে মঙ্গলবার চীনা ইউয়ানের মান শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে; ওই অঞ্চলজুড়ে বিমান ও অন্যান্য পরিবহণ সংস্থার শেয়ারের মান পড়ে গেছে। 'চীনা নববর্ষের কারণে লাখ লাখ মানুষ চীনের বিভিন্ন অংশে নিজেদের শহরে ফিরবে; যা (ভাইরাস) পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। শেয়ারের এ অধোগতি মাত্র শুরু হলো, সামনের দিনগুলোতে আমরা এ রকম আরও দেখব," বলেছেন সিঙ্গাপুরের সিএমসি মার্কেটের ব্রোকারেজ অ্যানালিস্ট মার্গারেট ইয়াং। সোমবার পর্যন্ত চীনে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে অন্তত ২৩৩ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে; আক্রান্তদের বেশিরভাগই উহানের বাসিন্দা হলেও বেইজিং এমনকি সাংহাইয়েও সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে বলে চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও চারজনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। ভাইরাসটি আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শ থেকেও ছড়াতে পারে বলে সোমবার চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে; এরই মধ্যে অন্তত ১৫ স্বাস্থ্য কর্মী প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। ভাইরাসটির উৎপত্তি কোথা থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাণীদেহ থেকে প্রথম এটি ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ডবিস্নউএইচও। চীনা কর্মকর্তারা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বাজারে সংযোগের কথাও জানিয়েছেন। 'মানবদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে- এটা জানার পর উহানের করোনাভাইরাসটি সার্স মহামারির মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে এমন শঙ্কা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতে উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। ২০০৩ সালের পর থেকে চীনাদের ভ্রমণের হার অনেক বেড়েছে; যে কারণে এবার সার্স সদৃশ ভাইরাসটির সংক্রমণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, ইমেইলে এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কার কথাই বলেছেন লন্ডনভিত্তিক আইএইচএস মার্কেটের এশিয়া প্যাসিফিক অংশের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া খতিয়ে দেখতে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের গঠন করা বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ঝং নানশান অবশ্য এখনই এত উদ্বেগের কিছু দেখছেন না। আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় সার্সের মতো মহামারির বিপদ নেই, সোমবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে তাকে এমনটাই বলতে দেখা গেছে। 'সংক্রমণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। চীনের চমৎকার নজরদারি ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থাপনা ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করবে,' বলেছেন তিনি। এদিকে চীনের নতুন ভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীন থেকে আসা সরাসরি ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।