'করশূন্য' আয়কর রিটার্ন খতিয়ে দেখবে এনবিআর

২৩ জানুয়ারির মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্য দিতে বলা হয়েছে তথ্য বিশ্লেষণ করে কর ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এ সংখ্যা মোট রিটার্নের সাত থেকে আট শতাংশ

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আহমেদ তোফায়েল দেশে বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৪৬ লাখের ওপরে। সব ই-টিআইএনধারীরই প্রতি বছর তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এর মধ্যে যাদের করযোগ্য আয় আছে, কেবল তাদেরই আয়কর জমা দিতে হয়। তবে বিপুলসংখ্যক করদাতা আছেন যাদের করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর 'করশূন্য' আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। এবার এই করশূন্য আয়কর রিটার্ন খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার আয়কর শাখা প্রাথমিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সারা দেশের মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো থেকে ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ-বছরের জন্য করশূন্য আয়কর রিটার্নের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ২৩ জানুয়ারির মধ্যে সে তথ্য এনবিআরে পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কারো বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে রাজস্ব বোর্ড। এনবিআরের এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ও সংস্থার করদাতারা করযোগ্য সীমা থেকে নিচে আয় দেখিয়ে 'করশূন্য' রিটার্ন দাখিল করেন। এ সংখ্যা করদাতাদের জমা দেওয়া মোট রিটার্নের সাত থেকে আট শতাংশ। রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ আয়করদাতা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ হিসেবে করশূন্য জমা দেয়া রিটার্নের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। তবে করশূন্য রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে আয়কর আইনে কোনো বাধা না থাকলেও সংখ্যাটি এত বেশি হওয়া উচিত নয়। অনেক করদাতা আয়কর পরিশোধ এড়াতে করশূন্য রিটার্ন দাখিল করছেন এবং তাদের প্রকৃত আয় গোপন করছেন বলে এনবিআর মনে করে। তবে এ কাজটি যে সবাই করছে তাও ঠিক নয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর আইনজীবীরা কিছু ব্যক্তিগত লাভের জন্য করশূন্য রিটার্ন দাখিল করতে সহায়তা করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে, কর অফিসগুলোতেও কর্মচারী এবং কর্মকর্তারা করদাতাদেরকে করযোগ্য সীমা থেকে নিচে আয় দেখাতে সহায়তা করে থাকে। জানা গেছে, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে বিশ্বের যেসব দেশে কম কর আদায় হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে জিডিপির অনুপাতে কর আদায় মাত্র ১০ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও এই হার সবচেয়ে কম। কিন্তু করের হার সবচেয়ে বেশি। আবার মোট করের মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর মাত্র ৩ শতাংশ, যা হতাশাজনক। এ অবস্থার উন্নয়নে বিদ্যমান কর আইন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যাপক সংস্কার জরুরি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশে করের হার অনেক বেশি, কিন্তু কর আদায় কম। আর দেশের কর ব্যবস্থা শুল্কের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু উন্নত দেশগুলো তা ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, মোট রাজস্ব আয়ের মাত্র ৩ শতাংশ ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর থেকে আসে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে এই হার প্রায় ৮৬ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়াতে ৬২ শতাংশ, পাশের দেশ ভারতে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে বাংলাদেশ। জিডিপির বিপরীতে বর্তমানে বাংলাদেশে কর আদায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু ভারতে এই হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কর আদায় হচ্ছে। আর এ অবস্থার উত্তরণে এনবিআরের ব্যাপক সংস্কার দরকার। এদিকে, চলতি অর্থবছরে যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হচ্ছে না। বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছিল এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো। তাদের যুক্তি ছিল, গত চার বছর ধরে করমুক্ত আয়ের সীমা একই অবস্থায় রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তাতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যুক্তি দেখিয়েছেন, এই সীমা বাড়ানো হলে অনেকেই করের আওতার বাইরে চলে যাবেন, ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, অনেক উন্নত দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশের কম। অনেক দেশে করমুক্ত কোনো আয়সীমা নেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের সমান বা তার চেয়ে কম। বাংলাদেশে বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের দেড় গুণের বেশি। উলেস্নখ্য, গত বছর আয়কর দিবস পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের বিপরীতে কর আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। আর এবার কর আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। কর আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ।