বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
২০১১ সালের এক রায়ে হাইকোর্ট বিজিএমইএর ভবনটিকে 'হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো' উলেস্নখ করে ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়। নানা প্রক্রিয়া পেরিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বুধবার ভাঙা শুরু হয়েছে ভবনটি। চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ ভবন ভাঙার কাজ করছে। ভবনটি পুরো ভাঙতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানা গেছে। নিচতলা থেকে প্রতীকী ভাঙার কাজ শুরু হয় -যাযাদি
যাযাদি রিপোর্ট রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজের উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার-সংলগ্ন বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দীর্ঘ সময় ধরে এ ভবন ভাঙার বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছিল। এ ভবন পুরোটা ভাঙতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ ভবন ভাঙার কাজ করছে। এ কাজে তারা কোনো অর্থ নিচ্ছে না। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে 'হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো' উলেস্নখ করেন। হাইকোর্ট এ রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রায় নয় বছর লাগল এ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করতে। বুধবার নিচতলা থেকে প্রতীকী ভাঙার কাজ শুরু হয়। ভাঙার কাজ উদ্বোধন করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, 'হাতিরঝিলের মতো নয়নাভিরাম এলাকায় এই ভবন বিষফোড়ার মতো ছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটির ভাঙার কাজ আজকে উদ্বোধন করা হলো। এটার জন্য রাজউকের কোনো অর্থ খরচ করতে হচ্ছে না। রাজউককে উল্টো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা দিচ্ছে।' মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, ভবন ভাঙার কাজ করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতিনিধি, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ এবং নগর পরিকল্পনাবিদেরা এই কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করবেন। মন্ত্রী বলেন, র্'যাংগস ভবন ভাঙার সময় যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা যাতে না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।' কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভবনের ওপরের দুই তলা নিয়ে বিলাসবহুল 'অ্যাপারেল ক্লাব' করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট ও সভাকক্ষ আছে। বড় আকারের একটি মিলনায়তনও আছে। আজ রাজউকের পক্ষ থেকে সকালে বিজিএমইএ ভবনের কাছে চারটি এসকেভেটর নিয়ে আসা হয়েছিল। এগুলো দিয়ে ভাঙন কাজ শুরুর মহড়া দেওয়া হয়। এই ভবন নির্মাণের নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না-সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। শুধু এই ভবন না। হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। হাতিরঝিলের দূষণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'দূষণ রোধে কাজ করছি। এখন যে অবস্থা থাকবে না। ফল দেখতে পাবেন।' আজ ভাঙার কাজ উদ্বোধনের সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উলস্না খন্দকার, রাজউকের চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর আলম, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে পুরোদমে। এর জন্য সেফটি নেট ও কভার রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভাঙার পর প্রতিদিন জড়ো হওয়া আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হবে, পরে তা চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে। ওই আপিল ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।