হতাশার হার দিয়ে শুরু টাইগারদের

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে দারুণ শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানরাও মেটাতে পারেননি সময়ের সেই দাবি -বিসিবি
১৪২ রানের লক্ষ্য দিয়ে আর কতটা লড়াই করা যায়! তবুও বাংলাদেশের বোলাররা সাধ্য মতো চেষ্টা করলেন। শফিউল-আমিনুলদের এই চেষ্টা শুধু পাকিস্তানের জয় বিলম্বিত করেছে। শুক্রবার লাহোরে সফরকারী বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক পাকিস্তান। বাংলাদেশ যে লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেনি, সেটির দায় আসলে ব্যাটসম্যানদেরই! মোহাম্মদ রিজওয়ানের শটে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ; কিন্তু সেই ক্যাচ হাতে জমাতে পারলেন না মোহাম্মদ মিঠুন। ওই শটেই দুই রান নিয়ে জিতে গেল পাকিস্তান। শুক্রবারের ম্যাচের শেষটা বাংলাদেশের জন্য হয়ে রইল যেন প্রতীকী। ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশ ক্ষেত তৈরি করে দারুণ কিছুর, কিন্তু বারবার নিজেরাই ফসকে ফেলেছে সেসব সুযোগ। আর তাতে পাকিস্তান সিরিজ শুরু করেছে জয়ে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০তে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের বাংলাদেশ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২০ ওভারে করতে পারে ১৪১ রান। রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করতে পারেননি পাকিস্তান, খুঁড়িয়েছে শেষ দিকেও। তবে হারায়নি পথ, জিতেছে ৩ বল হাতে রেখেই। সবশেষ দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর শোয়েব মালিককে প্রায় এক বছর পর দলে ফিরিয়েছে স্বাগতিকরা। আর তাতে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়েছেন দারুণ প্রতিদান। ৪৫ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই দলকে নিয়ে গেছেন কাঙ্ক্ষিত জয়ের ঠিকানায়। ম্যাচসেরাও পুরস্কারও উঠেছে শোয়েব মালিকের হাতে। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল বেশ মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে ধীরে, নিচু হয়েছে অনেক ডেলিভারি। দুই দলের ব্যাটিংয়েই তাই ছিল না টি২০-এর ঝাঁজ। অভিজ্ঞ মালিক সেখানে গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে ব্যাটিংয়ে। ছিল না খুব পরিকল্পনার ছাপ। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ১০ ওভার খেললেও পাননি টি২০-এর ছন্দ। পরের ব্যাটসম্যানরাও মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি। মাঝারি পুঁজিতে বোলাররা চেষ্টা করেছেন লড়াইয়ের। পেরে ওঠেননি মালিকের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, উইকেট বেশ মন্থর। বাংলাদেশের রানের গতিও ছিল উইকেটের মতো ধীর। পাওয়ার পেস্নর ৬ ওভারে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ তোলেন কেবল ৩৫ রান। পাওয়ার পেস্নর পরও গতি খুঁজে পাননি দুজন। কোনো উইকেট না হারিয়েও ১০ ওভার শেষে রান ছিল মোটে ৬২। লেগ স্পিনার শাদাব খানকে স্স্নগ সুইপে ছক্কা মেরে তামিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেকল ভাঙার। কিন্তু দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান সেই ওভারেই। ৩৪ বলে ৩৯ করে ফিরেছেন তামিম। ইনিংসটির পথে সাকিব আল হাসানকে টপকে টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় আবার উঠে গেছেন শীর্ষে। আরেক ওপেনার নাঈমের ইনিংসও এগিয়েছে একই পথ ধরে। পারেননি শুরুর ঘাটতি পরে পুষিয়ে দিতে। আউট হয়েছেন ৪১ বলে ৪৩ করে। ঝড় তোলার জন্য যার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ, সেই লিটন দাস করতে পেরেছেন ১৩ বলে ১২। আফিফ হোসেন করেছেন কেবল ১০ বলে ৯। প্রায় একই পথের পথিক সৌম্য সরকার (৫ বলে ৭)। রানের গতি বাড়াতে চারে উঠে আসা মাহমুদউলস্নাহও পারেননি প্রত্যাশিত দ্রম্নততায় রান তুলতে। ১৪ বলে করেছে ১৯। বাংলাদেশ তাই যেতে পারেননি দেড়শ পর্যন্তও। ব্যাটিংয়ে ১৫-২০ রান কম হওয়ার হতাশা পেছনে ফেলে বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে শফিউল ইসলাম ফিরিয়ে দেন বাবর আজমকে। টি২০ র?্যাংকিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান এই সংস্করণে প্রথমবার শূন্য রানের স্বাদ পেলেন ঘরের মাঠে নিজের প্রথম নেতৃত্বে ম্যাচে। মুস্তফিজুর রহমান আলগা কিছু বলে রান গুনলেও ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ হাফিজকে। পাওয়ার পেস্নতে পাকিস্তান ২ উইকেট হারিয়ে তোলে কেবল ৩৬ রান। আর সেই চাপ থেকে পাকিস্তান আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে এহসান আলি ও মালিকের জুটিতে। অভিষিক্ত এহসান নিজের ২৫ রানে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম বিপস্নবকে, কিন্তু কঠিন সেই ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি এই লেগ স্পিনার। পরে বিপস্নবকেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে এহসান ফেরেন ৩২ বলে ৩৬ রান করে। শফিউল-আল আমিনদের দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানের পরের পথটুকু পাড়ি দেওয়া হয়ে উঠেছে কঠিন। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভেলায় দলকে টেনে নিয়ে গেছেন মালিক। আর শেষ দিকে দুর্দান্ত ডাইভ দিয়েও মালিকের ক্যাচ নিতে পারেননি লং অফ ফিল্ডার। মালিক তখন বিদায় নিলেও হতে পারত নাটকীয় কিছু। এমনকি শেষে রিজওয়ানের ওই ক্যাচ মিঠুন নিতে পারলেও ৩ বলে পাকিস্তানের লাগত ২ রান। হতে পারত অনেক কিছুই। কিন্তু হলো না কিছুই। শেষ পর্যন্ত পারল না মাহমুদউলস্নাহর বাংলাদেশ। আজ একই ভেনু্যতে দ্বিতীয় টি২০তে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৫ (তামিম ৩৯, নাঈম ৪৩, লিটন ১২, মাহমুদউলস্নহ ১৯*, আফিফ ৯, সৌম্য ৭, মিঠুন ৫*; ইমাদ ০/১৫, শাহিন আফ্রিদি ১/২৩, হাসনাইন ০/৩৬, রউফ ১/৩২, মালিক ০/৬, শাদাব ১/২৬)। পাকিস্তান : ১৯.৩ ওভারে ১৪২/৫ (বাবর ০, এহসান ৩৬, হাফিজ ১৭, মালিক ৫৮*, ইফতিখার ১৬, ইমাদ ৬, রিজওয়ান ৫*; শফিউল ২/২৭, মুস্তাফিজ ১/৪০, আল আমিন ১/১৮, সৌম্য ০/২২, আমিনুল বিপস্নব ১/২৮, আফিফ ০/৬)। ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : শোয়েব মালিক।