ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন

জয়ের নেশায় দিনরাত প্রচারণায় মত্ত প্রার্থীরা

রাজধানীর অলিগলি ঘুরে ভোটারদের দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রম্নতি। ছুটির দিনকেও কাজে লাগিয়েছেন তারা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০৫

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগোচ্ছে জয়ের নেশায় ততই দিনরাত প্রচারণায় মত্ত প্রার্থীরা। রাজধানীর অলিগলি ঘুরে ভোটারদের দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রম্নতি। ছুটির দিনকেও কাজে লাগিয়েছেন তারা। এদিকে শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম রাজধানীর নদ্দা এলাকায় ও বিএনপির তাবিথ আউয়াল মিরপুরে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস পুরান ঢাকার বাবুবাজারে ও বিএনপির ইশরাক হোসেন গোপীবাগ এলাকায় গণসংযোগ করেন। আতিকুল ইসলাম: সিটি নির্বাচনের বাকি ছয় দিনে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে নেতা-কর্মীদের আহ্‌বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। শনিবার দুপুরে নির্বাচনী প্রচারের ১৬তম দিনে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নদ্দা এলাকার কালাচাঁদপুর মোড়ে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে এ আহ্ব্‌ান জানান তিনি। আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আর বেশি দিন বাকি নেই। এ ছয় দিনে সব ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে হবে।' তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের আহ্‌বান জানান ভোটারদের গিয়ে বলতে হবে একটি আধুনিক ও যানজটমুক্ত শহর গড়তে নৌকায় ভোট দিতে। এরপর সাইকেল চালিয়ে কালাচাঁদপুর বাজারে প্রচার চালান আতিকুল ইসলাম। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে জেনে কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কালাচাঁদপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেননি আতিকুল ইসলাম। শনিবার কালাচাঁদপুর মোড়ে নির্বাচনী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান, উত্তরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাকির হোসেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হাসিনা বারী ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এরপর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে প্রগতি সরণিতে আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি চাই না কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হোক। এ জন্য স্কুলের মাঠের সমাবেশ বাতিল করে দিয়েছি। এ কাজে কাউকে উৎসাহ দেব না। আমি চাই না নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো শিশু বা ছাত্রছাত্রী থাকুক।' এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশান স্বাস্থ্য ক্লাব পার্কে গণসংযোগ করেন আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, 'উত্তর সিটি করপোরেশন হবে আধুনিক, সচল ও মানবিক। আমি চাই আমাদের আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠুক সুস্থতায়।' তাবিথ আউয়াল : ঢাকা উত্তরে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ব?লে?ছেন, 'রাজধানীর ব?স্তিবাসী?দের উচ্ছেদ কর?তে বারবার প?রিক?ল্পিতভা?বে আগুন লা?গি?য়ে দেওয়া হ?চ্ছে। ব?স্তিবাসীরা অ?নেক কষ্টে আ?ছেন। আমরা নির্বা?চিত হ?তে পার?লে তা?দের? পুনর্বাসন করব।' শনিবার বেলা ১১টায় মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন কাঁচাবাজার এলাকায় নির্বাচনী গণসং?যোগ শুরুর প্রাক্কালে এসব কথা ব?লেন তাবিথ আউয়াল। বিএনপি মনোনীত এ মেয়রপ্রার্থী আরও ব?লেন, 'মিরপু?রে চাঁদাবা?জি ও মাদক ব্যবসা চল?ছে। আমরা বিজয়ী হ?লে এসব নির্মূলে কাজ কর?ব। কাউ?কে অন্যায় কর?তে দেওয়া হ?বে না। মিরপুর গা?র্মেন্ট শিল্প এলাকা। কিন্তু এখা?নে কর্মীদের নিরাপত্তা নেই। তা?দের নিরাপত্তায় আমরা কাজ কর?ব।' এসময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখার সমালোচনা করে তাবিথ আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সঙ্গে কখনো আ?পোস ক?রেন না ব?লেই মিথ্যা মামলায় তা?কে কারাগারে আট?কে রাখা হয়েছে। তা?কে চি?কিৎসার সুযোগ দেওয়া হ?চ্ছে না। ১ ফেব্রম্নয়ারি ধা?নের শী?ষে ভোট দি?লে তা খা?লেদা জিয়ার প?ক্ষে যা?বে। তা?কে আটক রাখা যা?বে না।? বিএন?পি চেয়ারপারস?নের উপ?দেষ্টা জয়নুল আ?বদিন ফারুক, বিএন?পির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আ?মিনুল হক, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউ?ন্সিলর প্রার্থী মাহফুজ হোসাইন খান সুমন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউ?ন্সিলর প্রার্থী দে?লোয়ার হো?সেন দুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএন?পির দপ্তর সম্পাদক এ?বিএম রাজ্জাক, যুবদল উত্ত?রের সাধারণ সম্পাদক স?ফিকুল ইসলাম মিল্টন, জিয়া প?রিষ?দের মহাস?চিব ড. এমতাজ হো?সেনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুপুর ২টার দিকে ইসিবি চত্বরে পথসভা ও গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। শেখ ফজলে নূর তাপস: রাজধানীবাসীর জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। শনিবার বাবুবাজার সেতু এলাকায় গণসংযোগ শুরুর আগে এক পথসভায় তিনি বলেন, 'আমরা গণসংযোগ করছি, বিপুল নেতাকর্মীসহ আমরা দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের প্রতিপক্ষ শুধু অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত। 'তাদের ঢাকাবাসীর জন্য কোনো উন্নয়নের রূপরেখা নেই। ঢাকাবাসীর উন্নত জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। তারা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, আর আমরা ঢাকাবাসীর উন্নয়ন নিয়ে গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত।' আগামী ২৮ অথবা ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হতে পারে জানিয়ে নৌকার প্রার্থী বলেন, 'আমাদের পাঁচটি রূপরেখা- ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আগামী ১ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচন। আমি মনে করি ঢাকাবাসীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঢাকাবাসীর রায়ের মাধ্যমেই উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে একটি নবসূচনা, নবযাত্রা আমরা করতে চাই। 'আমি আশা করি, ঢাকাবাসী সেই উন্নত ঢাকা গড়তে তাদের রায় নৌকা মার্কায় দিয়ে তাদের সেবক হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করবে। একই সঙ্গে স্ব স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সির প্রার্থীদের নির্বাচিত করে উন্নত ঢাকা গড়ার পক্ষে রায় দেবে।' এ সময় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরপ্রার্থী হাজী এম এ মান্নান (লাটিম প্রতীক) এবং ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরপ্রার্থী মো. আব্দুর রহমান মিয়াজীকে (ঘুড়ি প্রতীক) পরিচয় করিয়ে দেন তাপস। এর আগে বাবুবাজার সেতুর নিচে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব ম?হিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল ও স্স্নোগানে তারা মুখর করে তোলে আশপাশের এলাকা। বেলা আড়াইটার দিকে শেখ ফজলে নূর তাপস সেখানে উপস্থিত হলে নেতাকর্মীরা তার হাতে ফুলের নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ইশরাক হোসেন: আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ফজলে নূর তাপস একজন সজ্জন ব্যক্তি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর গোপীবাগে নিজ বাসার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইশরাক হোসেন বলেন, 'ওনার প্রতি আবেদন থাকবে নির্বাচনে তিনি যাতে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা না করেন। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করব রেজাল্ট যা হবে সেটাই মেনে নেব। কিন্তু ভোটে কোনো কারচুপি হলে সেটা কোনোভাবে মানব না।' তিনি বলেন, 'ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিলের দাবি বাস্তবায়ন হবে কি না জানি না। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে ইভিএমের ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু আমাদের তো ওই আশঙ্কাটা আছেই। ইভিএমের ভোট সুষ্ঠুভাবে হবে না।' ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার একজন কর্মী মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় ইশরাকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, ওনার নাম আমিনুল ইসলাম। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) নির্বাচনী প্রচারকালে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি আমার একজন কর্মী। গত কয়েক দিন আগে ওয়ারী থানা এলাকায় একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়েছে। ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'হামলা করবে করুক, এটা আমাদেরও দেশ। কারও জমিদারি নয়, কারও দখলদারিত্ব চলবে না। আমরা আমাদের মতো কাজ চালিয়ে যাব।' এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, 'আমি বার বার বলে আসছি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী কোন পরিবারের সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমাদের শক্তি হলো জনগণ। এ দেশটা কোনো পরিবারের সম্পত্তি না। জনগণ আমার ডাকে সারা দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এ দখলদারিত্ব ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাব।' তিনি বলেন, 'আমরা ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি করব। আমরা সবার সহযোগিতায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই।'