ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ হার বাংলাদেশে

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:১১

ক্রীড়া প্রতিবেদক
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০তে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল -বিসিবি
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ প্রথম ম্যাচে তবুও বলতে পেরেছিলেন, '১৪১ করেও যে আমরা শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করতে পেরেছি, এটা বোলারদের চেষ্টার কারণে।' কিন্তু শনিবার কী বলবেন? ব্যাটিং-বোলিং কিছুই ঠিকঠাক হয়নি। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি২০তে বাংলাদেশ হেরেছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো দ্বিতীয় ম্যাচে শোধরাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ। বাস্তবে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র। ব্যাটিং হলো আগের দিনের চেয়ে আরও ঢিমেতালে। আর বোলিংটাও ছিল একদমই ধারহীন। পারফরম্যান্সে নেই পরিকল্পনার ছাপ, শরীরী ভাষায় নেই কোনো ঝাঁজ। ফলও তাই অনুমেয়। ফলে পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পেল না সফরকারী বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি২০তে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। আর এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাবর আজমের দল। লাহোরে শনিবার তামিম ইকবাল খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। কিন্তু বল খেলেন ৫৩টি! ব্যাটিং লাইনআপের বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। ২০ ওভারে তাই বাংলাদেশ করতে পারে কেবল ১৩৬ রান। পরে রান তাড়ায় পাকিস্তান জিতে নিল অনায়াসে। যদিও শুরুতে উইকেট হারালেও বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজের শতরানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২০ বল হাতে রেখেই দারুণ এক জয় তুলে নিল। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট আগের দিনের মতো অতটা মন্থর ছিল না এ দিন। ১৬০-১৭০ হতে পারত লড়ার মতো রান। বাংলাদেশ পারেনি কাছে যেতেও। বাংলাদেশের ভোগান্তির শুরু ম্যাচের শুরু থেকেই। শাহিন শাহ আফ্রিদির অফ স্টাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। এবারের বিপিএলে তিন-চারে নেমে ব্যাটিং সামর্থ্যের ঝলক দেখানো মেহেদি হাসানকে সুযোগ দেওয়া হয় তিনে। প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে খানিকটা আশা জাগিয়েছিলেন তিনি ইমাদ ওয়াসিমকে সুইপে ছক্কা মেরে। কিন্তু মোহাম্মদ হাসনাইনের গতি সামলাতে না পেরে আউট হন বাজে শটে। আরেক পাশে তামিম এগোতে থাকেন নিজের গতিতে। বল প্রতি রান তুলেছেন ঠিকই, কিন্তু ছিল না টি২০'র তাড়া। পাওয়ার পেস্নর ৬ ওভারে রান তাই ২ উইকেটে ৩৩। রানের গতিতে দম দিতে পারেননি লিটন দাসও। হারিস রউফকে দৃষ্টিনন্দন একটি চার মারেন, বাকি সময়টা টাইমিং করতে ধুঁকতে দেখা যায় তাকে। তার অবদান ১৪ বলে ৮। ৮ ওভার শেষে উইকেট নেই তিনটি, দলের রান রেট কেবল পাঁচের সামান্য ওপরে। প্রয়োজন ছিল তখন একইসঙ্গে একটি জুটি ও দ্রম্নত রান। তামিম ও আফিফ হোসেনের জুটি প্রথমটি পেরেছে, দ্বিতীয়টি নয়। শাদাব খানকে পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন আফিফ। ইফতিখারকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ান তামিম। কিন্তু ছিল না ধারাবাহিকতা। ৪৫ রানের জুটিতে তাই লাগে ৪২ বল। থিতু হওয়ার পর যখন প্রয়োজন ঝড় তোলার, আফিফ আউট তখনই। ২০ বলে করতে পারেন কেবল ২১ রান। অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহও এরপর পারেননি বড় শট খেলতে। সৌম্য সরকারের খুব বেশি করার সুযোগই ছিল না। ভরসা ছিলেন কেবল তামিম। কিন্তু দেশের সফলতম ব্যাটসম্যানও পারেননি শুরুর ঘাটতি শেষে পুষিয়ে দিতে। শাদাবকে বাউন্ডারিতে ৪৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তামিম। ওই ওভারে মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। ওই ওভারের পর বাকি ছিল ৪ ওভার। তামিম-মাহমুদউলস্নাহ জ্বলে উঠলে হয়তো দেড়শ ছুঁতে পারত বাংলাদেশ। পারেননি কেউই। আগের ম্যাচের মতোই রান আউট হন তামিম। ইমাদের দারুণ থ্রো সরাসরি ফেলে দেয় বেলস, তবে দৌড়ের শুরুতে শ্লথ থাকায় দায় ছিল তামিমের নিজেরও। আর শেষ ওভারে আমিনুল ইসলাম বিপস্নবের দুটি বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ যেতে পারে ১৩৬ পর্যন্ত। তবে মাঝ বিরতিতেও বোঝা যাচ্ছিল, ওই স্কোর যথেষ্ট নয়। কারণ বাবর ও হাফিজের ব্যাটিংয়ে প্রমাণ হয়েছে সেটিই। শফিউল ইসলাম যদিও নিজের প্রথম ওভারে দলকে উইকেট এনে দিয়েছিলেন আবারও। এহসান আলি আউট হন ৭ বলে শূন্য রান করে। কিন্তু বাংলাদেশের সাফল্যের শেষ ওখানেই। রান রেটের চাপ ছিল না, বাংলাদেশের বোলিং ছিল না ধারাবাহিক। বাবর ও হাফিজ তাই এগিয়েছেন অনায়াসেই। সময় যত গড়িয়েছে, আরও নুইয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আর শেষ দিকে হাফিজকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। মুস্তাফিজের বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন লিটন। ব্যর্থতার ষোলো কলা তাতে পূর্ণ হয়। ১৩১ রানের অপরাজেয় জুটিতে দলকে জিতিয়ে ফেরেন বাবর ও হাফিজ। টি২০র্ যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজম অপরাজিত ৬৪ করেন ৪৪ বলে। আর মোহাম্মদ হাফিজ অপরাজিত থেকে যান ৪৯ বলে ৬৭ রান করে। আগের দিন ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও কিছুটা লড়াই করতে পেরেছিলেন বোলাররা। তবে এদিন সেই স্বস্তিও মেলেনি। সফরকারী বাংলাদেশ উড়ে গেছে সব বিভাগেই। সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (তামিম ৬৫, নাঈম ০, মেহেদি ৯, লিটন ৮, আফিফ ২১, মাহমুদউলস্নাহ ১২, সৌম্য ৫*, আমিনুল বিপস্নব ৮*; ইমাদ ০/১৬, শাহিন আফ্রিদি ১/২২, হাসনাইন ২/২০, রউফ ১/২৭, শাদাব ১/২৮, মালিক ০/৯, ইফতিখার ০/১২)। পাকিস্তান : ১৬.৪ ওভারে ১৩৭/১ (বাবর ৬৬*, এহসান ০, হাফিজ ৬৭*; মেহেদি ০/২৮, শফিউল ১/২৭, আল আমিন ০/১৭, মুস্তাফিজ ০/২৯, আমিনুল বিপস্নব ০/১৬, আফিফ ০/১৬, মাহমুদউলস্নাহ ০/৩)। ফল : পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে এগিয়ে ম্যাচসেরা : বাবর আজম