পাহাড় আবার রক্তাক্ত

খাগড়াছড়িতে গোলাগুলিতে ৭ জন নিহত, আহত ৩

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
শনিবার খাগড়াছড়িতে গোলাগুলির ঘটনায় নিহতের স্বজনদের আহাজারি Ñযাযাদি
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আবার রক্ত ঝরল। শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনিভর্র এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে সাতজনকে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন জন। স্থানীয় লোকজন জানান, খাগড়াছড়ি শহরে প্রকাশ্যে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। হামলার সময় দুবৃর্ত্তরা ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ বক্সেও গুলি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত সাতজনের মধ্যে তিনজনকে নিজেদের কমীর্ বলে দাবি করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তারা এ ঘটনার জন্য ‘সরকারি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় জেএসএস (এমএন লারমা) এবং স্থানীয় একটি মুখোশধারী বাহিনীকে’ দায়ী করেছে। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হেডকোয়াটার্র (খাগড়াছড়ি) আবদুল আওয়াল বলেন, সকাল ৮টার দিকে খাগড়াছড়ির স্বনিভর্র এলাকায় দুইপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পুলিশ ও ইউপিডিএফ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন ইউপিডিএফ-সমথির্ত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ-সম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ সমথির্ত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা। বাকি চারজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা, বিধান চাকমা ও শন কুমার চাকমা রয়েছেন। খাগড়াছড়ির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কতার্ (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন টিপু বলেন, খুন-গুম ও অপহরণের বিরুদ্ধে স্বনিভর্র বাজারে শনিবার ইউপিডিএফের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এই দলের কমীর্রা তাদের দলীয় কাযার্লয়ের কাছে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় অতকিের্ত হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা। তারা ইউপিডিএফ কাযার্লয় এবং স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডে একযোগে হামলা চালায়। এতে সাতজন নিহত ও একজন আহত হন। এ ঘটনাকে ‘পূবর্পরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ করেছেন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। তিনি এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের সংগঠন জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে যাওয়া সংগঠন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ বক্স ছিল। এরপরও সেখানে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করে কীভাবে সন্ত্রাসীরা চলে যায়?’ ইউপিডিএফের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি সদরের ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এ অভিযোগ অমূলক। আমাদের বক্সের ওপরও হামলা হয়েছে। সেখানে পঁাচটি গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ মাত্র বক্সে এসে পেঁৗছেছে। তখনই এ ঘটনা ঘটে।’ ঘটনায় জেএসএস (এমএন লারমা) জড়িত বলে ইউপিডিএফ যে অভিযোগ করেছে, সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন জেএসএসের (এমএন লারমা) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে।’ আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান। কারা এই সংঘষের্ ছিলÑ জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউপিডিএফের প্রসিত গ্রæপ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এই দুইপক্ষ গোলাগুলিতে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’ হাসপাতালে কথা হয় ধীরাজ চাকমার মামা বিশ্বকল্যাণ চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ধীরাজ ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের বন্ধে তিনি শনিবার সকালে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে আসেন। পানছড়ির উলুছড়িতে নিজ বাড়িতে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ধীরাজ। সন্ত্রাসীরা তাকেও গুলি করেছে। হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন রূপম চাকমার মা সেবিকা চাকমা। তিনি বলেন, ‘রূপম কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষাথীর্ দিয়েছিল। আমার ছেলের কী দোষ? আমার বুকটা কেন খালি করল? ঘটনার পর থেকে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। স্বনিভর্র বাজারসহ আশপাশের এলাকার সব ধরনের দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে জোরদার করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো পযর্ন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। এর আগে গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। তিনি জেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরদিন তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুবৃর্ত্তদের হামলায় পঁাচজন নিহত হন। শেষকৃত্যস্থলে আসার পথে খালিয়াজুড়ি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত লোকজনের মধ্য একজন তপন জ্যোতি চাকমা। তিনি ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের আহŸায়ক ছিলেন। অন্য চারজন হলেন সুজন চাকমা, প্রণব চাকমা, সেতু চাকমা ও তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসচালক মো. সজীব।