চীনে করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জাহিদ হাসান
চীনে প্রাণঘাতী রোগ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বাংলাদেশিদের অনেকেই পড়াশুনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে চীনে অবস্থান করছেন। ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানেই এ দেশের ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ চীনে অবস্থানরত তাদের শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের সভাপতি মো. আব্দুল মোমেন যায়যায়দিনকে বলেন, চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে তারাও আতঙ্কিত আছেন। কারণ চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রতিমাসে প্রায় ৩০০ জন ব্যবসায়ী চীনে যাতায়াত করেন। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকায় অনেকের চীনে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। তবে সরকারের উচিত সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া। তিনি জানান, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা আজ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। এছাড়া চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করবেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে এখনো চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে। তবে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগেই তাদের ভ্রমণ বাতিল করছেন। রোববার ১০ জন ব্যবসায়ী চীন যাওয়ার কথা থাকলেও, তারা তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। আর সেখানে উচ্চশিক্ষার জন্য অনন্ত পাঁচশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে যাদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দূতাবাস শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে অধ্যয়নরত অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। এদের একজন চীনের হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাকিবিল তূর্য (২৩) শনিবার নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন, 'বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এমন নিউজ বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রচার করা হলেও এ খবর ভিত্তিহীন। আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার খোঁজ নেয়া হয়নি।' তূর্য আরও লেখেন, 'সম্প্রতি চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে আমি বাস করছি। এখানে আমরা প্রায় ৫০০ জনেরও অধিক বাংলাদেশি উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত।' তিনি বলেন, 'উহান থেকে বহির্গামী সব বাস-ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছে এবং ৬০০-এরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চাইলেও এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছি না।' এদিকে চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে দেশে জরুরি সতর্কতা গ্রহণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি এক সভা করেন। সভায় চীনে সম্প্রতি ধরা পড়া করোনাভাইরাসের ব্যাপকতা নিয়ে আলোচনা হয়। রোগটি বর্তমানে কতটি দেশে পৌঁছে গেছে এবং কতজন আক্রান্ত ও মারা গেছেন সে বিষয়ে মন্ত্রী খোঁজ নেন। দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর, নৌবন্দরসমূহ, স্থলবন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করেন। এছাড়া সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় জরুরি সভা করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় মন্ত্রী সহমত ব্যক্ত করে আগামী ২৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্রিয় অংশ গ্রহণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের নির্দেশ প্রদান করেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা নাও পড়তে পারে। যেহেতু চীনে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে, তাই তারা সবাই এখন ফিরতে গিয়ে এই ভাইরাসের জীবাণু বহন করে দেশে নিয়ে এলে তা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কাজেই সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে চীনে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থগিত করার উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানালে মন্ত্রী বলেন, 'চীন-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক গভীর। এ কারণে বাংলাদেশের বহুসংখ্যক মানুষ বাণিজ্যিক কারণে চীনে যাতায়াত করছে। সুতরাং এই ভয়াবহ ভাইরাস বাংলাদেশে যেকোনো উপায়ে চলে এলে এটি আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ কারণে আগামী ২৮ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে চীনে ও চীন থেকে বাংলাদেশে সকল ধরনের ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।'