বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল ভারত

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৮১ ছুঁয়েছে

করোনাভাইরাস আতঙ্কে শওকত আহমেদ নামে এক বাংলাদেশিকে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনের হুনান প্রদেশের চাংশা বিমানবন্দরের বহির্গমনে এক শিশুকে পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মী। দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে -ইন্টারনেট
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ৮১ ছুঁয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে এই ভাইরাসে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন আজ জানায়, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে মৃত মানুষের সংখ্যা ৫৬ থেকে বেড়ে ৭৬ হয়েছে। বাকি ৪ জন অন্যত্র মারা গেছে। দেশটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, চীনে করোনাভাইরাসে ২ হাজার ৭৪৪ জন সংক্রমিত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন শতাধিক মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানায়, চীনে করোনাভাইরাসে আগের থেকে আরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এই ভাইরাসের বিস্তার আরও বাড়তে পারে। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহর। এই ভাইরাসের দ্রম্নত বিস্তারের কারণে উহান শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছেদ পড়েছে। হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে লাখো চিকিৎসাকর্মী যোগ দিয়েছেন। দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবার চান্দ্রবর্ষের উৎসব আয়োজন বাতিল করেছে চীন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চান্দ্রবর্ষের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শনিবার জরুরি বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর দেশ এই করোনাভাইরাসের কারণে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বলছে, এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনো বেশি কিছু জানা যায়নি। এর ইনকিউবেশন পর্যায় ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই সময় ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়ে থাকে। কিন্তু সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এমনটা নয়। চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। চীনের বাইরে সারা বিশ্বে ২ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাল ভারত আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্কে শওকত আহমেদ নামে এক বাংলাদেশীকে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও ভারতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। শওকত আহমেদ দুই মাস আগে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। ফেনী জেলার সদর উপজেলার সাহিবপুর গ্রামের সৈয়দ আহমেদের ছেলে শওকত আহমেদ মোটর পার্টসের ব্যবসা করেন। শওকত আহমেদ জানান, ১ সপ্তাহ ভ্রমণ করে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে তিনি চীন থেকে দেশে ফিরেন। গতকাল সোমবার সকালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তিনি ভারতে ঢোকেন। এরপর পাসপোর্টে চীনের ভিসা দেখতে পেয়ে আগরতলা ইমিগ্রেশনে তাকে আটকে দেয়া হয়। তিনি বলেন, দুই মাস আগে চীন ভ্রমণ করায় তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর আখাউড়া ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত হওয়ার গুঞ্জন এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের যশলদিয়া গ্রামের মীর সোহেলের ছেলে মীর আব্দুর রহমান (৩) রোববার রাত ২টার দিকে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। এক ঘণ্টার ব্যবধানেই মারা যায় সে। এর আগে রোববার সকাল ৮টার দিকে একইভাবে মারা যান ওই শিশুর চাচা মীর জুয়েলের স্ত্রী শামীমা বেগম (৩৪)। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, তারা দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শামীমার ভাই রকি আহমেদ বলেন, 'আমার বোন রোববার সকালে শরীরে জ্বর অনুভব করছিলেন। কিছুক্ষণের ভেতর জ্বর কিছুটা বাড়ে। একই সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে চাকা চাকা রক্তের দাগ দেখা দেয়। এর মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মারা যান তিনি।' তিনি জানান, এরপর রাতে মীর সোহেলের ছেলে আব্দুর রহমানের শরীরেও জ্বর জ্বর ভাব দেখা যায়। একইভাবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মারা যায় সে। তার শরীরেও রক্ত জমাটের দাগ দেখা যায়। পরিবারের সদস্যদের ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। এ বিষয় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীম আহমেদ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর খবরটি নিশ্চিত করে বলেন, 'ওই বাড়িতে সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।' শামীমা ও রহমানের মৃতু্য করোনাভাইরাসে হয়েছে- এমন আলোচনা প্রশ্নে তিনি বলেন, 'তাদের করোনাভাইরাসের কারণে মৃতু্য হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে তাদের মৃতু্যর সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না। তদন্ত রিপোর্ট দেখার পর বলা যাবে।'