আড়ংয়ের ১১ নারীকর্মীর ৩৬ ভিডিও ধারণ করে সজীব

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সিরাজুল ইসলাম সজীব
তানভীর হাসান প্রথমে নারী সহকর্মীদের সঙ্গে সখ্য। এরপর তাদের সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত। পরে কৌশলে ওই নারী সহকর্মীর পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য ধারণ। এরপরই বেরিয়ে আসে তার আসল রূপ। ওই ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কখোনো আবার টাকাও দাবি করে বসে। এতে রাজি না হলে ফেক ফেসবুক আইডিতে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানহানি করা তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। হঁ্যা, এটি কোনো ক্রাইম পেট্রোলের গল্প নয়। এ ধরনের ১১ নারীর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন আড়ংয়ের সাবেক সেলসম্যান সিরাজুল ইসলাম সজীব (২২)। এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার সজীব আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি উলেস্নখ করেন ১১ জানুয়ারি রাতে তার সাবেক সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম সজীব তার মেসেঞ্জারে একটি ভিডিও দেখতে বলেন। সীমান্ত সৈকত নামের ওই ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো ভিডিওটিতে তার পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা যায়। এরপর সজীব তাকে ভিডিও কলে শরীর দেখাতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ওই ঘটনার তদন্তে নামে বানানী থানা পুলিশ। এদিকে এ ঘটনার আগ থেকেই ভোরের শিশির নামে অপর একটি ফেসবুক আইডি থেকে আরও কয়েকজন নারীর পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় অন্তত দুই নারী পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি সেলে এসে অভিযোগ করেন। ওই ঘটনার তদন্তে নামে সাইবার সিকিউরিটি সেলের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে তারা বনানীর বিষয়টিও আমলে নেয়। এক পর্যায়ে দেখা যায়, ভোরের শিশির ও সীমান্ত সৈকত নামে ফেসবুক আইডির ফুটেজগুলো একই পজিশন থেকে তোলা এবং সবাই আড়ং এর নারী কর্মচারী। পরে পুলিশ সজীবকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ভোরের শিশির নামে একটি ফেসবুক আইডির মালিককে আমরা সন্ধান করছিলাম। এ সময় আরও কয়েকজন নারী আমাদের কাছে পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে। এরপর আমরা তদন্তের আরও গভীরে গিয়ে দেখতে পাই, অপরাধী একজনই। পরে ২৫ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সজীব আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সজীব তার অপরাধ স্বীকার করেছে। সে এই পর্যন্ত বনানী আড়ং শাখার ১১ নারী সহকর্মীর ৩৬টি ভিডিও ধারণ করেছে। তার সবগুলোই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ নারী তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেগুলোও মামলার অভিযোগপত্রে উলেস্নখ করা হবে। সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সজীব বনানী আড়ং এ সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত ছিল। সে সময় চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে নারী কর্মচারীদের ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার ভিডিও ধারণ করত। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে চাকরিচু্যত করা হয়। কিন্তু তার কাছে আগে থেকেই আরও নারীর ভিডিও দৃশ্য ধারণ করা ছিল। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়েই অক্টোবর মাসে ধারণ করা ওই ভিডিও এর বিষয়টি চেপে যান আড়ং এর কর্মকর্তারা। পরে এক নারী কর্মীকে ফুটেজ পাঠিয়ে নগ্ন শরীর দেখাতে বলায় ক্ষেপে যান ওই নারী কর্মী। তিনি বিষয়টি অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এরপর তাদের পরামর্শে ১৬ জানুয়ারি ওই নারী বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন (নং-৯৫৫)। এরপর টনক নড়ে আড়ং কর্তৃপক্ষের। তারা পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সজীবের বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। এরপর গত শনিবার দুপুরে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে সিরাজুল ইসলাম সজীবকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার সজীবের বাবা মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। বর্তমান ১০৯৮ পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় বসবাস করতো। গ্রেপ্তারের সময় সজীবের কাছ থেকে একটি রেডমি ৫ পস্নাস ফোনসেট জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে তার নিজের ফেসবুক আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ১১ নারী কর্মীর ভিডিও ধারণ ও হুমকির আদ্যপান্ত স্বীকার করেছে। আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, একজন বিক্রয় প্রতিনিধির ১৬ জানুয়ারি বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে আমরা অবহিত আছি। এই মামলাটি দায়ের করার ব্যাপারে অভিযোগকারীকে শুরু থেকেই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যেকোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সব সময় কঠোর অবস্থানে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বনানী আউটলেটের সাবেক বিক্রয় প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একজন সহকর্মীর যৌন হয়রানিমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরিচু্যত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।