মজুদ পর্যাপ্ত, তবুও চালবাজি

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হাসান আরিফ দেশে দানাদার (চাল-গম) খাদ্যশস্যের চাহিদার কমতি নেই। সরকারি মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। বাজার সরবরাহ স্বাভাবিক। বেসরকারি পর্যায়েও আমদানি হচ্ছে। অথচ এরপরও চাল নিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী চালবাজি করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবসায়ীদের কঠিক বার্তা দিয়েছে। পানি ঘোলা করলে প্রয়োজনে পেঁয়াজের মতো ব্যাপক ভর্তুকি দিয়ে চাল আমদানি করতেও সরকার প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে এবং সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। চাল নিয়ে কোনো ঝামেলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য অনুযায়ী দেশে দানাদার (চাল-গম) খাদ্যশস্যের বার্ষিক চাহিদা দুই কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন ৩ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে দৈনিক চাহিদা আট হাজার ২৩ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন। পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যমতে, উৎপাদন পর্যায়েই ৮০ হাজার মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত থাকছে। যার জন্য সরকার এক পর্যায়ে রপ্তানিরও উদ্যোগ নিয়েছিল। বর্তমানে অবশ্য তা স্থগিত রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি মজুদের পরিমাণ ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ১০ হাজার ৯১৯ মেট্রিক টন। আর গম তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন। এছাড়া ধান আকারে মজুদ আছে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন। আর চট্টগ্রাম বন্দরে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন গম খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চালের দাম বাড়তে শুরু করার পরই খাদ্যমন্ত্রী চাল ব্যবসায়ীদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে হুঁশিয়ার করেন। সূত্রটি জানায়, মন্ত্রী বলেছেন, চালের দাম যদি আরও বাড়ানো হয় তাহলে সরকার তা কোনোভাবেই মেনে নিবে না। এজন্য যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। প্রয়োজনে চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি করে ব্যাপক ভর্তুকি দিয়ে তা খোলাবাজারে বিক্রি করবে। একই সঙ্গে যেসব ব্যবসায়ী অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এর আগে যেসব ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। লাগাতারভাবে চালের দাম বাড়ার পর এখন আবার কিছুটা কমেছে। এই সময় দেশে কোনো বন্যা, খরা, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও নিত্য প্রয়োজনীয় এই খাদ্য দ্রব্যটির দাম প্রতি কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। বর্তমানে পাইকারিভাবে প্রতি বস্তায় দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে তার সুফল এসে পৌঁছায়নি। এতে বিপাকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে হুলস্থুলকান্ড চলার মধ্যেই সব ধরনের চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। আড়তদার, মিল মালিক কিংবা খুচরো বিক্রেতা- সবাই একবাক্যে বলছেন, এ সময়ে এভাবে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল গেট থেকেই বেশি দামে তাদের চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া তাদের উপায় নেই। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মিল মালিকদের দায়ী করছেন তারা। চালের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এর পেছনে কারও না কারও কারসাজি রয়েছে। সরকার এদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় চলে আসবে। গোলাম রহমান আরও বলেন, এই সরকারের আগের আমলেও এভাবে বাজারে কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী ঢাকা-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দায়ীদের খুঁজে বের করে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায় না। যারা অপকর্ম করে তাদের যদি বারবার ছাড় দেওয়া হয় তাহলে এই ঘটনা বারবার ঘটবে। চাল ব্যবসায়ীরাই জানালেন, দেশের বাজারে এখন যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তার প্রায় পুরোটাই দেশের ভেতরেই উৎপাদন করা। ভারত বা পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা চালের প্রভাব বাজারে এখন নেই বললেই চলে। চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ২ দশমিক ২১ হাজার মেট্রিক টন চালের এলসি খোলা হয়েছে। অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর এক চাল ব্যবসায়ী জানান, মিল মালিকরা ধাপে ধাপে দাম বাড়ায়। আবার নানা অজুহাত দেখিয়ে বিক্রি বন্ধ করে রাখেন তারা। এর পর কিছুদিন বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করে। পরে সরকার থেকে চাপ দিলে আবার বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমিয়ে বলে দাম কমানো হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে বিক্রেতারা মিল মালিকদের দায়ী করলেও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলছেন, ধানের দাম একটু বেড়েছে বলে মিনিকেট চালের দাম সামান্য বেড়েছে। যে ধানটা আমরা আগে ৮৫০ টাকায় কিনেছি সেটা এখন ১০২০ টাকা দরে কিনছি। এ কারণে সামান্য বেড়েছে, যা খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়।