করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছে প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সতর্কতা -যাযাদি
যাযাদি ডেস্ক চীনে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০৬ জন মারা গেছে। এছাড়া দেশটিতে এই ভাইরাসে ৪ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করা হয়েছে। কিছু শহরে গণপরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহর। ভাইরাসটির দ্রম্নত বিস্তারের প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে উহান শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে লাখো চিকিৎসাকর্মী যোগ দিয়েছেন। চীনা ন্যাশনাল হেলথ কমিশন সতর্ক করে বলেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার আরও বাড়তে পারে। চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে কেউ মারা যায়নি। সবশেষ সিঙ্গাপুর ও জার্মানিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, \হতাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। আর হুবেই প্রদেশ ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিরোধে সরকার প্রস্তুত এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে এখনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নতুন ধরনের এ ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। তবে এ ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দৃঢ়চিত্তে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো ভাইরাস যেন দেশে আসতে না পারে সেজন্য প্রথমত চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্যানিংসহ তাদের নাম-ঠিকানা টেলিফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আইইডিসিআর থেকে তাদের দুই সপ্তাহ মনিটরিং করা হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে ট্রিটমেন্ট ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন তৈরি করে চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, চীনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করার চিন্তাভাবনা নেই। তবে পারতপক্ষে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে চীন ভ্রমণ না করাই ভালো। চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সম্পূর্ণরূপে সুস্থ আছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির আগে তারা কেউ দেশে ফিরতে পারবেন না বলে তিনি জানান। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, আইইডিসিআর পরিচালক মিরজাদী সেব্রিনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। স্থলবন্দরে মেডিকেল ক্যাম্প কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের উদ্যোগে চাতলাপুর স্থলবন্দর চেকপোস্টে একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার এ মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। জানা যায়, সম্প্রতি চীনসহ কিছু দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং চাতলাপুর ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও সচেতনতার ব্যাপারে মতবিনিময় করেন কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষ। চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে রোববার থেকে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের উদ্যোগে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। তবে ভাইরাস নির্ণয়ের লক্ষ্যে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে যাত্রীদের শারীরিক স্ক্রিনিং করার কোনো যন্ত্র বসানো হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নাজমুস সাইদ জানান, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পথে উভয় দেশে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের প্রাথমিকভাবে শ্বাসতন্ত্র রোগ, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ইত্যাদি স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছেন। পাশাপাশি তারা যাত্রীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরামর্শ ও লিফলেট বিতরণ করছেন।