বিডিএফের সেমিনার

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ছোট দেশগুলোর যে ক্ষতি হয় তার জন্য বড় দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি করে অবদান রাখা দরকার

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:১০

অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের দুদিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন -ফোকাস বাংলা

যাযাদি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়। পৃথিবীর অন্যান্য ছোটখাটো দেশও দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ছোট দেশগুলোর যে ক্ষতি হয় তার জন্য বড় দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি করে অবদান রাখা দরকার। বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) দু'দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উলেস্নখ করে বলেন, 'আমরা যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি আমি আশা করি উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদেরকে খুব বেশি শর্ত না দিয়ে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন, যেন যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটা আমরা আরও ভালোভাবে করতে পারি।' বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে কোনো ম্যাজিক নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এটা হচ্ছে একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ, তৃণমূল পর্যায়ের অবহেলিত মানুষ- সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করাই হলো আওয়ামী লীগ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজকের বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে।' দেশের উন্নয়নে নেয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন টানা তিন মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব সামলে আসা শেখ হাসিনা। ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত হবে, কোন কোন ক্ষেত্রকে সরকার গুরুত্ব দেবে এবং কিভাবে দেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জীবনকে উন্নত করা যাবে, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। 'লক্ষ্যটা শুধু শহরভিত্তিক মানুষের জন্য নয়। এটা হচ্ছে সমগ্র গ্রামের মানুষ কেউ যেন অবহেলিত না থাকে। কেউ যেন বাইরে পড়ে না থাকে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। প্রতিটি মানুষের জীবন যেন উন্নত হয়, অর্থবহ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।' বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতি দূর করার প্রত্যয়ও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি দূর করতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শিশুদেরকে আমরা আস্তে আস্তে বড় করতে চাই, তাদের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ যাতে ঘটে সেই বিকাশ ঘটিয়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য 'ডেল্টা পস্ন্যান ২১০০' প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার কথা উলেস্নখ করেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলা করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'এই ক্ষেত্রে আমি বলব আমরা এই জলবায়ুর বিষয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করি বা আমরা অনেক প্রতিশ্রম্নতি পাই কিন্তু সে প্রতিশ্রম্নতি কেউ আর পূরণ করে না সেভাবে। 'আমরা খুব সামান্য কিছু সহযোগিতা পেয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের উন্নত দেশগুলো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরও এগিয়ে আসা দরকার, আরও সহযোগিতা দরকার।' বাংলাদেশের পাশাপাশি ছোট ছোট দ্বীপ এবং অন্যান্য দেশ যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের সকলেরই এই সহযোগিতা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের যে ক্ষতি তার জন্য বাংলাদেশ কিন্তু কোনোভাবেই দায়ী না। কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছি। সেই কারণেই যারা এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদেরই সব থেকে বেশি অবদান রাখা দরকার। অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লোকাল কনসালটেটিভ গ্রম্নপের দুই কো-চেয়ার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ। বাংলাদেশ সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরতে দুই দিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য 'টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর অংশীদারিত্ব'। এর আগে ২০১৮ সালের ১৭-১৮ জানুয়ারি সর্বশেষ বিডিএফ সম্মেলন হয়েছিল।

 

সব দিকে নজর রাখি : প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
দেশের সব দিকে নজর রাখার চেষ্টা করেন বলে সংসদে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির হারুনুর রশীদ সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকে প্রটোকল ছাড়া বেরিয়ে ঢাকার মানুষ কেমন আছে তা দেখার অনুরোধ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রটোকল নিয়ে চলি। সেখানে নিরাপত্তার বিষয় আছেÑ এটাও যেমন ঠিক আবার শহর বা দেশের অবস্থা আমি একেবারেই জানি না, তা নয়। আমি সব দিকেই নজর রাখার চেষ্টা করি। ভালোভাবে লক্ষ রাখি। যেহেতু এ দেশের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। সব দিকে নজর দেওয়া আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। কী হচ্ছে আমরা নজর রাখি। তবে এতে এটাও শুনতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে কেন সব কাজ করতে হয়?’
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসায় এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করে এমন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার সবসময় সতর্ক রয়েছে।’
রাঙ্গার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বর্তমান সরকার ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্য সব ধর্মের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
রাঙ্গার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আমরা শুরু করে দিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এটা চলতে থাকবে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’