বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ৫৪ লাখ টাকাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে -যাযাদি
হঠাৎ ধনী হওয়ার নেশায় পেয়ে বসে 'বাংলা ট্র্যাক কমিউনিকেশন লিমিটেডের' অফিস সহকারী ও ক্লিনারদের। এ কারণে তারা ওই অফিসে চুরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতে গত ১০ ডিসেম্বর তারা অফিসের সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপর অপেক্ষার পালা। কখন মোটা অঙ্কের টাকা অফিসে আসবে। অবশেষে তাদের প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়। গত মাসের শেষের দিকে অফিসে ঢোকে মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর চলতি মাসের শুরুতে তারা অফিস থেকে চুরি করে ৬০ লাখ টাকা। সন্দেহ এড়াতে তারা নিয়মিত অফিসও করছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। দুই মাস ধরে পরিকল্পনা করলেও মাত্র দুই দিনের মধ্যে ডিবির জালে একে একে ধরা পড়ে সবাই। এ ঘটনায় গত বুধবার গ্রেপ্তার ৪ জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৪ লাখ টাকা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হঠাৎ ধনী হওয়ার জন্যই এমন কাজ করেছে বলে স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, চলতি মাসের ৩ তারিখে বনানী থানায় 'বাংলা ট্র্যাক কমিউনিকেশন লিমিটেডের' পক্ষ থেকে ৬০ লাখ টাকা চুরির একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ওই মামলার ছায়া তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। তদন্তের এক পর্যায়ে ওই অফিসের ৫ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর বুধবার ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। ঘটনার সঙ্গে পলাতক একজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, 'বাংলা ট্র্যাক কমিউনিকেশন লিমিটেডের' হেড অব ইনভেস্টমেন্ট আশরাফুজ্জামান
চৌধুরীর নিজস্ব ভল্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা চুরি হয়। অফিসের ভল্ট ছিল তছনছ অবস্থায়। টাকাগুলো তিনি গত মাসের শেষের দিকে অফিসে এনে রাখেন। ধারণা করা হচ্ছে, জানুয়ারি মাসের ৩০ থেকে ফেব্রম্নয়ারি মাসের ২ তারিখের মধ্যে কোনো একসময় টাকাগুলো চুরি হয়। ওই কয়েক দিন অফিস বন্ধ ছিল। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাশেদ আল-আমিন এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার অজ্ঞাতদের নামে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরে গোয়েন্দা বিভাগে পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. জুনায়েদ আলম সরকার যায়যায়দিনকে বলেন, তদন্তে একপর্যায়ে ওই অফিসের লোকজনের ডাটা ও মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। পরে টাকা চুরির ওই সময়ে সেখানে অফিসের ৫ জনের মোবাইল ফোনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর পুলিশ প্রথমে অফিস সহকারী মো. জাকিরকে ডিবি অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে জাকির টাকা চুরির কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে আদ্যপান্ত বর্ণনা করে।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জাকির বলে, হঠাৎ বড় লোক হওয়ার নেশায় সে বিভোর ছিল। এ কারণে ২ মাস ধরে সে অফিসে চুরির পরিকল্পনা করে। কারণ অফিস সহকারী হওয়ার কারণে আশরাফুজ্জামানের ভল্টে মাঝেমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছিত রাখার খবর সে জানত। একার পক্ষে এত টাকা চুরি করা সম্ভব নয়- এ কারণে পরিকল্পনায় যুক্ত করে অফিসের ক্লিনার আসাদকে। আসাদও লোভে পড়ে জাকিরের কথামতো গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর তারা অপেক্ষা করতে থাকে। কবে মোটা অঙ্কের টাকা্ অফিসে আসবে। এ সময়ে কিছু টাকা এলেও সেগুলো পরিমাণে কম হওয়ায় তারা চুরি করেনি। অবশেষে গত ৩০ জানুয়ারি আশরাফুজ্জামান ৬০ লাখ টাকার ব্যাগ নিয়ে ভল্টে রাখেন। বিষয়টি দেখতে পায় জাকির। এবার তার পরিকল্পনায় যুক্ত করে আপন ছোট ভাই এবং একই অফিসের অফিস সহকারী আরিফকে। আরিফ যুক্ত করে লিটন নামের আরেক অফিস সহকারীকে। সিদ্ধান্ত হয় ভোটের দিন তারা চুরি করবে। কিন্তু আরিফের ও লিটনের পক্ষে এত বড় অঙ্কের টাকা একা সরানো সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ আব্বাস নামের আরেক ক্লিনার গেটে সেদিন ডিউিটিতে ছিল। এবার তাদের সাথে আব্বাসকেও যুক্ত করা হয়। পরে আরিফ ও লিটন দিনব্যাপী প্যানের পকেটে টাকা নিয়ে নর্দায় তাদের বাসায় জমা করতে থাকে। কারণ নির্বাচনে ওই দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এ কারণে তারা টাকা পরিবহণের জন্য নিজেদের পোশাককেই ব্যবহার করে। এভাবে কয়েক ধাপে তারা ৬০ লাখ টাকা অফিস থেকে চুরি করে নর্দা এলাকার একটি বাসায় জড়ো হয়। এক দিন পরে তারা ৫৪ লাখ টাকা একটি ব্যাগে ভরে আব্বাসের এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে। বাসার লোকজনকে বলা হয় সেখানে কাপড় আছে। এ কারণে আব্বাসের ফুপুও বিষয়টি সন্দেহ করেনি। এরপর থেকে তারা নিয়মিত অফিস করছিল।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. জুনায়েদ আলম সরকার জানান, সন্দেহ এড়াতে তারা টাকা চুরির পর পালিয়ে যায়নি। কারণ পালিয়ে গেলে তারাই এ কাজ করেছে বলে সবাই সন্দেহ করবে। এ কারণে তারা নিয়মিত অফিস করছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তারা চাকরি ছেড়ে দেবে। এরপর ভাগবাঁটোয়ারা করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও আব্বাসকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃতরা আরও কোনো অপরাধে অতীতে যুক্ত ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে তাদের ২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তারা দুই মাস ধরে পরিকল্পনা করলেও গোয়েন্দা পুলিশ মাত্র এক দিনের মাথায় টাকা উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।