অমর একুশে

শহিদ মিনার গুঁড়ালেও স্মৃতি আজও অমলিন

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শোকসাগরে তখন ডুবে আছে ছাত্র-জনতা। ২২ ফেব্রম্নয়ারিই দেয়ালে দেখা যায় দু-একটি পোস্টার- 'শহিদ স্মৃতি অমর হোক'। যেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ভাষা শহিদরা, সেখানেই গড়তে হবে স্মৃতির মিনার। একথা জনে জনে ছড়িয়ে যায়। সে সময় নির্মাণ সামগ্রীর অভাব ছিল, তবে অভাব ছিল না মানসিক প্রস্তুতি আর কর্মস্পৃহার। মেডিকেল ছাত্র বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের ওপর দায়িত্ব পড়ে শহিদ মিনারের নকশা তৈরির। কয়েকটি খসড়া নিজেরাই বাতিল করে তারা একটি নকশা দাঁড় করান। অন্যরাও এটি পছন্দ করেন। নকশাটি ছিল বলিষ্ঠ ভিত্তির ওপর প্রতিবাদের প্রতীক। কাঠামো শেষ করার পর কাঁচা অবস্থাতেই পোস্টার করা হয়। নকশায় ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া হবে মিনারটি। মেপে দেখা গেল, উচ্চতা সাড়ে ১০ ফুট ছাড়িয়ে গেছে। গাঁথুনি ছিল মজবুত। তখন ভোর হয়ে গেছে। বদরুল আলম লিখলেন একটি ফলক- 'স্মৃতিস্তম্ভ'। ফলকটি সাবধানে সেঁটে দেওয়া হলো মিনারের বুকে। একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো স্মৃতিস্তম্ভটি। চারদিকে ছোট ছোট খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হলো স্মৃতিস্তম্ভটি। দড়ির গায়ে মিনারের চারপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো কয়েকটি রক্তিম পোস্টার, যেগুলোয় লেখা ছিল- রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, শহিদ স্মৃতি অমর হোক, সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চালু কর। আর ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা তহবিলে \হমুক্তহস্তে দান করুন'। বেলা যত বেড়েছে, দর্শনার্থীও বেড়েছে ততই। পরবর্তী দুদিন ফুল আর চোখের পানিতে মহিমান্বিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি। যে যতটুকু পেরেছেন, ততটুকুই দান করেছেন তহবিলে। ২৪ ফেব্রম্নয়ারি সকালে শহিদ সফিউর রহমানের বাবাকে দিয়ে একবার অনানুষ্ঠানিকভাবে শহিদ মিনারটির উদ্বোধন করা হয়। ২৬ ফেব্রম্নয়ারি আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন। সেদিনই পুলিশ এসে শহিদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। ২৬ ফেব্রম্নয়ারির শেষ বিকালে সশস্ত্র পুলিশ এসে মেডিকেল হোস্টেল ঘেরাও করে। তিন ট্রাকভর্তি পুলিশ সেখানে আসে। তাদের সঙ্গে ছিল গাঁইতি, বেলচা, শাবল, মোটা দড়ি ও বড় বড় হাতুড়ি। ৩ নম্বর গেটের ৫ নম্বর ঘরের শরফুদ্দিন আহমদ তখন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তিনি দেখলেন, পুলিশ ছাত্রদের দিকে রাইফেল তাক করে রেখেছে। প্রথম কয়েকবার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মিনারের বুকে মোটা দড়ি বেঁধে ট্রাকের সাহায্যে হঁ্যাচকা টান দিয়ে স্তম্ভটিকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর খন্ড খন্ড টুকরা করে ট্রাকে তুলে নেওয়া হয়। কোদাল, গাঁইতি ও শাবল দিয়ে চওড়া ভিত ৫ ফুট মাটির গভীর থেকে তুলে প্রথমে খন্ড বিখন্ড করে ট্রাকে তোলা হয়। প্রথম শহিদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু পরে দেশবাসীর মন থেকে তার স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। বায়ান্ন সালে ভেঙে ফেলা শহিদ মিনারের মিনিয়েচার তৈরি করা হয়। এর আগে একুশে ফেব্রম্নয়ারির দিনই রাজশাহীতে তৈরি করা হয় শহিদ মিনার।