করোনাভাইরাস

মৃতু্যর মিছিলে আরও ১১৬ জন

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। চীনের হুবেই প্রদেশে মৃতু্যর মিছিলে একদিনে আরও যোগ হয়েছে ১১৬ জন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৩ জনে। শুক্রবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রদেশটিতে মারা গেছেন ১১৬ জন। এখানে নতুন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও চার হাজার ৮২৩ জন। এ প্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ হাজার ৯৮৬ জনে। এদিকে চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত হংকং, ফিলিপাইন ও জাপানে তিনজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামক প্রমোদতরীতে। বিলাসবহুল ওই নৌযান তিন হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে এখন কোয়ারেন্টাইনে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে থাকা ১৭৫ জনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মহামারি আকার ধারণ করে এ ভাইরাসটি। ভাইরাসটি চীনের ৩১ প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চল ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং প্রাণহানি বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় অধিকাংশ দেশ। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অনেক আগেই সার্স ভাইরাসকে ছাড়িয়েছে করোনা। ২০০২-০৩ সালে আট মাসের মধ্যে ২৫টি দেশে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন আট হাজার ৯৮ জন এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৭৪ জন। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী নেই : আমাদের মাদারীপুর স্টাফ রিপোর্টার জানান, দেশে কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী নেই, চীনফেরত যাদের মধ্যে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই এখন সুস্থ। শুক্রবার বিকালে মাদারীপুরে আছমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি একথা বলেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস যাতে দেশে না ঢুকতে পারে তার পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানো হয়েছে, এমনকি মেডিকেল টিমও রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২ হাজার যাত্রী আসে। এই মেডিকেল টিম ২৪ ঘণ্টা এসব যাত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। কারও দেহে এই রোগের ভাইরাস পাওয়া গেলে তাকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাসের গুজব ছড়ায় তারা দেশের মঙ্গল কামনা করে না। মানুষকে আতঙ্কিত করা মোটেই কাম্য নয়। সবাই সজাগ থাকলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বন্ধু দেশ চায়নায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আমরা স্বাস্থ্যসেবার সরঞ্জামাদি পাঠাব। করোনাভাইরাসে চায়নায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা গেছেন। আরও ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। জাহিদ মালেক আরও বলেন, চীনে আটকাপড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া সরকারের আরও উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। চীন থেকে যদি কেউ এ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরে তাহলে ডবিস্নউএইচওর গাইডলাইন ফলো করা হবে। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : এদিকে চীনের বাইরে করোনাভাইরাস সেভাবে ছড়াচ্ছে না, তবে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশে এর ভয়াবহতা থামছেই না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে। করোনাভাইরাসে মৃতু্য ও আক্রান্তের হারের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগের নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো অনেক। ১৪ হাজার ৮৪০ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু বিশদভাবে লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কারণে হুবেই প্রদেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে। এটা প্রাদুর্ভাব উলেস্নখযোগ্য হারে পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে না। প্রাদুর্ভাবের উপকেন্দ্রে রোগটি নিয়ে তদন্তের জন্য সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল চীনে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। জাপান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো বলেছেন, শুক্রবারের মধ্যে জাহাজ থেকে নেমে আসার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে ওই ব্যক্তিদের সরকার প্রদত্ত আবাসে থাকতে হবে। তবে দেশটি জানিয়েছে, ৮০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সি কোনো যাত্রীর করোনাভাইরাস নেগেটিভ এলে তাদের জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হবে। রপ্তানি বন্ধ ২০ দিন : খুলনার পাইকগাছার কাঁকড়া-কুঁচিয়া ব্যবসায় চীনের করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায় সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গত ২০ দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় মারা যাচ্ছে মজুতকৃত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া। কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার ব্যবসায় ধস নামায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ব্যবসায়ও। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মৎস্য দপ্তর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যে অবস্থা তাতে কাঁকড়া-কুঁচিয়া রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজার বিকল্প নেই। তবে চীন সম্প্রতি আশ্বস্ত করায় পরিস্থিতি দ্রম্নত স্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য দপ্তর কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় অত্র এলাকা চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার উৎপাদিত কাঁকড়া সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, ওই উপজেলায় ২০০ হেক্টরে শুধু কাঁকড়া এবং ১৭ হাজার হেক্টর মিশ্র ঘের থেকে কাঁকড়া উৎপাদন হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে এসব উৎস থেকে কুঁচিয়াও উৎপাদন হয়। উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সূত্রমতে, ওই এলাকা থেকে গত বছর ৪ হাজার ১০০ টন কাঁকড়া ও ৩০০ টন কুঁচিয়া উৎপাদন হয়। উৎপাদিত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও হংকংসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। যার মধ্যে ৯০ ভাগ কাঁকড়া শুধু চীনেই রপ্তানি হয়। মাসখানেক আগে চীনে করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ায় গত ২৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন এই এলাকার সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী চাষিরা। ২০ দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া ব্যবসায়। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও সরবরাহ ও বেচাকেনা নেই বললেই চলে। দামও নেমে এসেছে কয়েক গুণ।