১৭ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন ছেলে

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হারিয়ে যাওয়া মাকে ১৭ বছর পর খুঁজে পেয়ে আবেগাপস্নুত ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদার। ছবিটি রোববার দুপুরে পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকা থেকে তোলা -যাযাদি
মা বকুল বালার বয়স এখন ৮০ বছরের কাছাকাছি। ১৭ বছর আগে তিনি তার ছোট মেয়ে আলো রানীকে (১৬) খুঁজতে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। সে থেকে তিনি নিখোঁজ। এত দিন পর রোববার তার বড় ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদার (৪৫) তাকে খোঁজে পেয়েছেন। পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকার তিতাস মোড়ের একটি ছাপড়ায় মাকে খুঁজে পান ছেলে। এ সময় আপস্নুত হয়ে পড়েন ছেলে। বকুল বালার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার তালবাড়ীয়া গ্রামে। দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে সংসার ছিল তার। বড় মেয়ের বিয়ের পর ছোট মেয়ে আলো রানীকে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পরই আলোকে বাপের বাড়ি ফেলে তার স্বামী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর স্বামীর খোঁজে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হন আলো। ১৭ বছর আগে একদিন মা মেয়েকে খুঁজতে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। বকুল বালার নাতি রিপন চন্দ্র হাওলাদার পটুয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। পটুয়াখালী শহরের একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। গত শুক্রবার সকালে শহরের সবুজবাগ এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় বকুল বালাকে দেখে তার সন্দেহ হয়। তিনি তার বাবা ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদারকে খবর দেন। এরপর গতকাল দুপুরে ঠাকুর কৃষ্ণ পটুয়াখালী গিয়ে হারিয়ে যাওয়া মাকে চিনতে পেরে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নাতি রিপন হাওলাদার বলেন, তার ঠাকুমা যখন হারিয়ে যান তখন তিনি খুব ছোট ছিলেন। তবে বাবা-মায়ের কাছে ঠাকুমার শারীরিক বিবরণ শুনে এই বৃদ্ধাকে তার ঠাকুমার মতো মনে হয়। তখন তিনি বাবাকে খবর পাঠান। বকুল বালার ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, 'আমার মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। বোনকে খুঁজতে বের হয়ে মা নিখোঁজ হন। বিভিন্ন জায়গায় তাকে খুঁজেছি। এখানকার লোকজনের আশ্রয়ে এবং তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে মা এত দিন বেঁচে আছেন। আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।' দীর্ঘ ১৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাতের খবরে সবুজবাগ এলাকার লোকজন ভিড় জমাতে থাকেন। স্থানীয়রা জানান, প্রায় চার বছর আগে বর্ষার দিনে এ বৃদ্ধা এখানে একটি ঘরের ছাপড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় এলাকার শারমীন আক্তার লাইজু নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী তাকে আশ্রয় দেন। হোটেল থেকে বৃদ্ধাকে খাবার দেন। এভাবে কয়েক দিন যাওয়া পর এলাকার কাউন্সিলর কাজল বরণ দাস বৃদ্ধার জন্য কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করেন। কাজল বরণ দাস বলেন, 'এ বৃদ্ধা এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কথা কম বলতেন। মনে হতো মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। আশপাশের বাসায় গিয়ে খাবার খেতেন। আমরা সবাই মিলে একটি ছাপড়া ঘর তুলে দিয়ে সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি। তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ফিরে পাওয়ায় আমরা খুব খুশি।'