করোনাভাইরাস বাংলাদেশিদের

সিঙ্গাপুর না ছাড়ার পরামর্শ

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশটি ত্যাগ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রবাসীদের অহেতুক ভয় না পেয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ অনুরোধ জানানো হয়। সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশন রোববার প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, কোনো ধরনের গুজব বা অসমর্থিত খবরে আতঙ্কিত না হয়ে কেউ যেন সিঙ্গাপুর ত্যাগ না করেন। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো সংস্থা বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এ ধরনের কর্মকান্ড সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করে হাইকমিশন। করোনাভাইরাসে সিঙ্গাপুরে প্রায় ৭৪ জন নাগরিক শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি। এ কারণে সিঙ্গাপুরে প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা আতঙ্কে রয়েছেন। করোনাভাইরাস পাওয়া \হযায়নি : আইইডিসিআর করোনাভাইরাস সন্দেহে দেশে এ পর্যন্ত ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কারো মধ্যেই ওই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তবে আরো ছয়জন পরীক্ষাধীন রয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে তারাও মুক্ত রয়েছেন। এমনটি বলছে বাংলাদেশ সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য তুলে ধরেন। এ দিকে জাতীয় রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা চীন বা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরা বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'নাম-ঠিকানা প্রকাশ করায় তাদের সামাজিকভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে সবাইকে।' অনুষ্ঠানে আরো মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিলস্নাত, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলী নূর, জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন, ডিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর স্বাস্থ্য বিভাগীয় মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ফসিউর রহমান প্রমুখ। উলেস্নখ্য, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে শুরু থেকে পালস্না দিয়ে নিহত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৯৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। যেখানে উৎপত্তিস্থল উহানের এক হাসপাতাল পরিচালকও রয়েছেন। এই নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮৬৮ জনে। মৃতু্য বেড়ে ১৮৭৩ চীনে আরও ৯৮ জনের মৃতু্যর মধ্য দিয়ে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৭৩ জনে। তবে জানুয়ারির পর থেকে সোমবারই প্রথম চীনের মূল ভূখন্ডে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছে দুই হাজারের নিচে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখন্ডে আরও ১ হাজার ৮৮৬ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৮ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৪৩৬ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার চীনে মোট ৯৮ জনের মৃতু্য হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ৯৩ জন। তাতে চীনের মূল ভূখন্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৮৬৮ জনে। চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত তাইওয়ান, ফ্রান্স, হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে পাঁচজনের প্রাণ গেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৮৭৩ জনে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার মানুষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহানসহ কয়েকটি শহর গত জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রোববার থেকে পুরো হুবেই প্রদেশে যানবাহন চলাচলের ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যানবাহন বরে না করতে বলা হয়েছে বাসিন্দাদের। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলকারাখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এই হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই গতবছরের শেষে নভেল করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। চীনে বিপুল সংখ্যক শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় বিশ্ব অর্থনীতিতেও অস্থিরতা বাড়ছে, জাপান আর সিঙ্গাপুর পড়েছে মন্দার ঝুঁকিতে। অ্যাপল জানিয়েছে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং চীনের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। মার্চের শুরুতে চীনের পার্লামেন্ট অধিবেশন বসার কথা থাকলেও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তা স্থগিত করা হয়েছে বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।