কুরিয়ারে অস্ত্র-মাদক পাঠাতে গিয়ে ধরা খেলেন এসআই

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকার একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ডিবি থেকে সদ্য বদলিকৃত এসআই আবদুল জলিল মাতবরকে। বুধবার রাতের এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তাকে রিমান্ড চেয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্র্রেপ্তারকৃত জলিলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নানা ধরনের অভিযোগ ওঠায় দুই সপ্তাহ আগে তাকে গোপালগঞ্জে বদলি করা হয়। সেখানে যোগদানের পর তিনি ছুটিতে ছিলেন। মিরপুর জোনের ডিসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণপুরের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে দারুস-সালাম থানায় ফোন করে একটি পার্সেল থেকে মদের বোতল ভেঙে এলকোহল ছড়াচ্ছে বলে জানানো হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পার্সেলটি চেক করে অস্ত্র ও গুলি,গাজা-ইয়াবার সন্ধান পায়। এরপর ওই পার্সেলের মালিকের সন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় সেটি পুলিশের একজন এসআইর নামে। এরপর এসআই জলিলকে থানায় ডেকে আনা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে পার্সেলের মালিক তিনিই বলে নিশ্চিত হওয়ার পর মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে গ্র্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল তাকে ওই মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, পার্সেল থেকে একটি দেশি অকেজো পিস্তল, ৪০ রাউন্ড পিস্তল ও রাইফেলের গুলি, ৫ হাজার ২৮৯ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৩শ গ্রাম গাঁজা, ৯ ক্যান বিয়ার ও ৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। পরে পার্সেলের মালিক এসআই আবদুল জলিল মাদবরকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন। এরপর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনকে ডেকে আনলে তারা জানান, ওই পার্সেলটি নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঠান এসআই জলিল। তারা এর স্বপক্ষে সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সরবরাহ করেন। সেখানে দেখা যায়, এসআই জলিল নিজেই নারায়ণগঞ্জের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেলটি জমা দিচ্ছেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে বহনকারী পরিবহণটি কল্যাণপুরে আসার পর সেটি গোপালগঞ্জ পাঠানোর জন্য গাড়ি বদল করার সময় মদের বোতল ভেঙে যায়। এরপরই বেরিয়ে আসে অস্ত্র-গুলি ও মাদক। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, দুই সপ্তাহ আগে তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় বদলি করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। স্বাভাবিক নিয়মেই তাকে বদলি করা হয়। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, ডিবিতে দেড় বছর চাকরি করার আগে জলিল মাতবর নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় ৭ মাস কর্মরত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে চাকরিকালীন বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছিল না। এ কারণে তাকে বিরক্ত হয়েই বদলি করা হয়। তদন্ত সূত্র দাবি করে, নারায়ণগঞ্জে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন সময়ে নিরীহ লোকজনকে ধরে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন। আবার অনেক সময় মাদক উদ্ধারের পর তা নিজের কাছে রেখে টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দিতেন। এসব আলামত তার কাছে রক্ষিত ছিল। সম্প্রতি বদলি হয়ে যাওয়ায় এসব অবৈধ মালামাল তিনি তার নতুন কর্মস্থল গোপালগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও তিনি এ ধরনের কর্মকান্ড চালাতেন। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্তের পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।