বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট আজ শুরু

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সুলতান মাহমুদ রিপন
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ও জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন -বিসিবি
ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বাংলাদেশ দল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট গত কয়েকটি সিরিজে টাইগারদের পারফরম্যান্স ছিল খুবই বিবর্ণ। আগের দুটো টেস্টে ভারত ও পাকিস্তানের কাছে অনেকটা অসহায় আত্মসর্মপণ করেছে মুমিনুল হকের দল। তাই এবার ঘুর দাঁড়ানোর পালা। তাইতো এবার দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দেবে টাইগাররা। কিন্তু এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে যে জিতবে, সেটাও জোর গলায় বলতে পারছে না স্বাগতিকরা। কারণ গেল বছর সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল তামিম-মুশফিকরা। কাজেই সফরকারী জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। অপরদিকে বাংলাদেশের লক্ষ্য ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। এমন সমীকরণ সামনে রেখে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে জিম্বুবাবুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মাঝে নভেম্বরে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানে টেস্ট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কারণ ভারতের বিপক্ষে ভালো করায় পাকিস্তানের বিপক্ষেও ভালো কিছুর আশায় ছিল টাইগাররা। কিন্তু টি২০ সিরিজের মতো টেস্ট মোটেও সুখকর হয়নি তাদের। এবার টাইগারদের মিশন জিম্বাবুয়ে। তবে সর্ব শেষ খেলা ছয় টেস্টেই হার বাংলাদেশের। তার মধ্যে ঘরের মাঠে হার আছে আফগানিস্তানের কাছেও। এসব ম্যাচে হারের ধরনও ছিল বড়ই দৃষ্টিকটু। সাদা পোশাকে বাংলাদেশ যেন বড়ই রুগ্‌ণ। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে মাঠে নামার আগে টানা হারের এই গস্নানি দূর করার আশা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে টানা পরাজয়ে জর্জরিত বাংলাদেশ। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার নিমিত্তেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আমন্ত্রণ জানিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। কিন্তু দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচারে বেশ পিছিয়েই রয়েছে মুমিনুল অ্যান্ড কোং। ফলে পাহাড়সম চাপ নিয়েই আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট খেলতে মাঠে নামতে যাচ্ছে ডমিঙ্গো শিষ্যরা। কিন্তু এই চাপকে খুব একটা প্রাধান্য দিচ্ছেন না বাংলাদেশ দলপতি মুমিনুল হক। তিনি বলেন, 'না বাড়তি কোনো চাপ নাই, যতটুক থাকার অতটুকুই আছে। আর চাপতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থাকবেই। এই চাপ নিয়েই খেলতে হবে স্বাভাবিক। এ চাপ নিতে না পারলে আমার কাছে মনে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কঠিন।' জিম্বাবুয়োর বিপক্ষে বিগত ৫ বছরের অভিজ্ঞতার কারণে জয়ের ব্যপারে বেশ আশাবাদী টাইগার দলপতি। কেননা বিগত পাঁচ বছরে পাঁচবারের দেখায় চারবার জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। তাই সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে কিছুটা চাপে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী এই দলপতি, 'দেখেন প্রত্যেকটা সিরিজের ম্যাচেই যখন আমরা খেলতে নামি, তখন আমরা কিন্তু জেতার জন্যই নামি। এটা জিম্বাবুয়ে হোক অস্ট্রেলিয়া যেই হোক। আর আপনিতো আন্তর্জাতিক যখন খেলবেন প্রেসারতো একটু থাকবেই। এতটুকু প্রেসার নিতে হবে আমাকেও, সবাই চিন্তা করতেছে ওভাবে। অবশ্যই ভালো ক্রিকেট খেলার ভাবনা সবার মধ্যে আছে। অনুশীলন সেশনেও লাস্ট ৩-৪/৫ দিন ধরে অনুশীলনে সেভাবেই আমরা প্রস্তুত হয়েছি।' ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ের হতাশা ভুলে নতুন উদ্যমে খেলা শুরু করতে চান স্বাগতিক অধিনায়ক, 'অবশ্যই আশা করি। আমি আগেও বলেছি আমি যখনই নামি যে দলের বিপক্ষেই নামি সবসময় কিন্তু জেতার জন্যই নামি। আর এই ম্যাচটাও জেতার জন্যই নামব। অবশ্যই আশাবাদী, আশা না থাকলেতো হবে না। সেইসঙ্গে আছে বিশ্বাসও। ইনশালস্নাহ কালকে (শনিবার) ভালো ক্রিকেট খেলব বলে আমরা দারুণ আশাবাদী।' জিম্বাবুয়ের ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে হার দিয়ে শুরু। এরপর গত বছর দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচও বাঁচাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ভারত সফরে দুই ম্যাচের টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর পাকিস্তানেও প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার। টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপের নতুন যুগে তিন ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে মুমিনুলের দল। জিম্বাবুয়ে হলেও সহজে জয়ের চিন্তাও করতে পারছে না স্বাগতিকরা। সর্বশেষ এই জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে দুই ম্যাচের সিরিজে প্রথমটিতেই জিতে নিয়েছিল। পরে বাংলাদেশে সমতায় ফেরে। এবার সফরকারীরা দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুটি টেস্টে দারুণ প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশে এসেছে। স্পিনের বিপক্ষে ভালো খেলার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তারা। তাইজুল-মিরাজকে সামলাতে নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত মনে করছেন, ক্রেইগ আরভিনরা। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক বলেন, 'ঘরের মাটিতে খেলতে সবাই চাপ অনুভব করে। বাংলাদেশের সম্প্রতি টেস্ট ফর্মও ভালো না। তবে আমরা আমাদের শক্তি ও পরিকল্পনাতেই ফোকাস রাখাছি।' ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দলে ছিলে পাঁচ পেসার। এর মধ্যে হাসান মাহমুদকে বিসিএলে খেলতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোচ জানিয়েছেন মুস্তাফিজ শেখার জন্য দলে রয়েছেন। এখন ইবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহি ও তাসকিন আহমেদের মধ্যে থেকে যেকোনো দুই বা একজনকে নিয়েই একাদশ সাজাতে পারে বাংলাদেশ। উইকেট যে স্পিনারদের সহায়ক হবে সেটা অনুমান করাই যায়। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানকেও একাদশে রাখা হতে পারে। দেশের বাইরে খেলার সময় তিন পেসার নিয়েই মাঠে নামতে হয়। তাই ভারসাম্য রাখার পরিকল্পনা করছেন কোচ। এছাড়া বাংলাদেশ সর্বশেষ দুই টেস্টে ঘরের মাটিতে খেলেছে অল-স্পিন বোলিং আক্রমণ নিয়ে। তার আগের দুটি টেস্টে পেসাররা থাকলেও সেভাবে বল করার সুযোগ পায়নি। সেই পরিকল্পনা থেকে বের হতে চায় দল। তবে বাংলাদেশের বড় চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। নিউজিল্যান্ড সফরে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির পর আর কেউই তিন অঙ্কের দেখা পাননি। সিনিয়রদের মধ্যে নিষিদ্ধ সাকিবের সঙ্গে নেই মাহমুদউলস্নাহও। তার জায়গায় অভিষেক হয়ে যেতে পারে ইয়াসির আলীর। ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরা জরুরি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফেরার কথাও জানান মুমিনুল। টানা ব্যর্থতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অবশ্যই জয়ের চিন্তা দলকে চাপে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু আর পাঁচটা ম্যাচের মতো করেই খেলতে চান অধিনায়ক মুমিনুল। জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে ১৬ টেস্ট। এর মধ্যে সাতটি জিতেছে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের জয় ছয়টিতে। বাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিই জিতেছে বাংলাদেশ। দু'দলের লড়াইয়ে একমাত্র ব্রেন্ডন টেলর এক হাজারেরও বেশি রান করেছেন। তিনিও এবার রয়েছেন জিম্বাবুয়ে দলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান মুশফিকুর রহিমের (৬৪৩)। তবে দু'দলের লড়াইয়ে বোলিংয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তাইজুল ইসলাম (৩৫) ও সাকিব আল হাসান (২৬)। সাকিব না থাকায় বড় দায়িত্বটা এখন তাইজুলের ওপরই। সব মিলে ব্যর্থতার ঘেরাটোপ থেকে বের হওয়ার পথ হিসেবেই জিম্বাবুয়েকে দেখছে বাংলাদেশ।