বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস

ছড়িয়ে পড়েছে ২৯ দেশে মৃত্যু বেড়ে ২৩৬০

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

চীনের মূল ভূখন্ডে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেওয়ায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়েছে ২৯ দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে, কিন্তু মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বিশ্বে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৬০ জনে, যাদের মধ্যে ১৫ জন ছাড়া বাকি সবার মৃতু্য ঘটেছে চীনে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখন্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জনে। আর ৩২টি দেশ ও অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৭ হাজার ৭৬৭ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃতু্য হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। তাতে চীনের মূল ভূখন্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৪৫ জনে। চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতু্য হয়েছে এ ভাইরাসে। তাদের মধ্যে ইরানে চারজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও দক্ষিণ কোরিায় দুজন করে এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স, তাইওয়ান ও ইতালিতে একজন করে আক্রান্তের মৃতু্য হয়েছে। মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃতু্য হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে। সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর সংক্রমণে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। আক্রান্ত রোগীদের লালা ও শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে চীনা বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে সার্সের চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গেই এর মিল পাওয়া যাচ্ছে বেশি। আগে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও সহজে এবং দ্রম্নত গতিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এত দিন নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু গত কয়েক দিনে চীনের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রম্নত বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। রয়টার্স জানিয়েছে, এ রোগ যাতে অন্যান্য দেশে মহামারি আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তার মতে, এখনো এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে যত সময় যাচ্ছে, সুযোগ ততই কমে আসছে। তিনি বলেন, 'যদি আমরা ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে গুরুতর সংকট এড়াতে পারব। তবে আমরা যদি সুযোগগুলো নষ্ট করি তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ।' দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে 'স্পেশাল কেয়ার জোন' ঘোষণা করা হয়েছে। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। ওই শহরে একটি চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেওয়া ১৬৯ জন মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই সম্প্রদায়ের নয় হাজার সদস্য স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার এবং পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চীনের চৌহদ্দি এবং জাপানের প্রমোদতরীর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপকূলে কোয়ারেন্টিন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৩৯ জনসহ জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দেশটির কওম শহর থেকে। সেখান থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবোল, আরাক, ইসফাহান, রাস্তসহ অন্যান্য শহরে। সব মিলিয়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। তাদের মধ্যে তেহরানের এক শহরের মেয়রও রয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কওম শহরে কাজ করা চীনা শ্রমিকদের কাছ থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন ইরানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কেবল শুক্রবারই সেখানে দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। ওই শহরে সব ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধের আহ্‌বান জানিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে বড় আকারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সেরকম পরিস্থিতি দেখা দিলে স্কুল ও অফিস আদালত বন্ধ করে দেওয়া হবে। দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন- এর কর্মকর্তা ন্যান্সি মেসোনিয়ের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়লেও কমিউনিটিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, 'তবে কমিউনিটিতেও এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কা প্রবল। আমরা চেষ্টা করব এ দেশে ভাইরাসের বিস্তার যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখা যায়।' অযথা আতঙ্ক বিপদ ডেকে আনবে: এদিকে নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে বলে আবারও হুঁশিয়ার করেছে আইইডিসিআর। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অযথা যেন গুজব না ছড়ায় সেদিকে সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। বিদেশি নাগরিক বা বিদেশ ফেরত অনেকে নানারকম হেনস্তার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'অতি উৎসাহী লোকের বাড়াবাড়ি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে বাড়িওয়ালারা তাদের বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। একজন চীনা নাগরিক তার ভাড়া করা বাসায় উঠতে গেলে তাকে উঠতে দেওয়া হয়নি। তিনি পরে একটি হোটেলে রাত কাটিয়েছেন।' কারও এ ধরনের কাজ পুরো দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, কেউ সত্যিই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এবং হেনস্তার কারণে তাকে বাইরে থাকতে হলে রোগটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, 'আমরা বলেছি যারা চীন থেকে এসেছেন, তারা যেন বাসায় থাকেন। তাকে ঢুকতে না দিয়ে সারা বাংলাদেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিলাম! কারও মধ্যে যদি আসলেই এ রোগের লক্ষণ থাকে, সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে তিনি কিন্তু তা গোপন করবেন।' দেশে এ পর্যন্ত ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে যে পাঁচ বাংলাদেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন, তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন, তবে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো তার বিষয়ে আশা ছাড়েনি। 'তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এই রোগীর জন্য যা যা করণীয় তারা করছেন। আমরা আশাবাদী, সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন।' সিঙ্গাপুর ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক প্রবাসী বাংলাদেশি নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বিশ্বে শুক্রবার পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩৬০ জনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে