আ'লীগ নেতার সিন্দুকে ২৭ কোটি টাকা, ১ কেজি সোনা

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সোমবার রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে স্থানীয় আ'লীগ নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে টাকা ও সোনা উদ্ধার করেনর্ যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম -যাযাদি
ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত দুই ভাই এবং আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার একটি বাসার ৫টি সিন্দুক থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা পেয়েছের্ যাব। এ ছাড়া ওই বাসা থেকে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম জব্দ করেছের্ যাব। মঙ্গলবারর্ যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। রাজধানীর পুরান ঢাকার ওই বাসার ঠিকানা- ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিট। সোমবার রাত সাড়ে ১২টায়র্ যাব ওই বাসায় অভিযান শুরু করে। এর নেতৃত্বে ছিলেনর্ যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, সরু গলির ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা ও পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর বইয়ের পাশাপাশি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বাসাটি খুব ছোট আকারের। এখানে শুধু একটি চৌকি আছে। এটি ছয়তলা ভবনের নিচতলার একটি বাসা। ধারণা করা হচ্ছে, এ বাসায় টাকা রেখে কেউ এর পাহারায় থাকতেন। তবে এখান থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। র্ যাব জানায়, উদ্ধার করা টাকা গণনার পর দেখা যায়, সেখানে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা রয়েছে। এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া এখন কারাগারে। ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাইকে গত জানুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এই দুই ভাই আলোচনায় আসেন। শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন। পুরান ঢাকার ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্তর্ যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়জুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত দুই ভাইয়ের ঢাকায় বহু ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা ২৪টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তারা পুরান ঢাকার এ বাড়ির খোঁজ পান। এর পরপরই এখানে অভিযান চালিয়ে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র?্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬টি। পুরানো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কেনেন বলে জানা যায়। ২০১৮ সালে এনামুল পান গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ। আর রূপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। তারা সরকারি দলের এসব পদ-পদবি জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।