চাল রপ্তানিতে ভর্তুকি দিয়ে বিপাকে সরকার

ডবিস্নউটিও নাইরোবী মিনিস্ট্রিয়াল ঘোষণা অনুযায়ী কোনো প্রকার কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। যদি কোনো দেশ এই খাতে ভর্তুকি দেয় তাহলে অন্য যে কোনো সদস্যদেশ অভিযোগ করতে পারবে

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

হাসান আরিফ
চাল রপ্তানিতে ভর্তুকির ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাধার মুখে বিপাকে পড়েছে সরকার। চালে ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নউটিও) শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে। এজন্য আগামী ৫ মার্চ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বসবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। উলেস্নখ্য, সরকারের সিদ্ধান্তে ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাল রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ ভর্তুকির দেওয়ার সার্কুলার জারি করা হয়। জানা গেছে, ডবিস্নউটিও নাইরোবী মিনিস্ট্রিয়াল ঘোষণা অনুযায়ী কোনো প্রকার কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। যদি কোনো দেশ এই খাতে ভর্তুকি দেয় তাহলে অন্য যে কোনো সদস্যদেশ অভিযোগ করতে পারবে। এবং অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তির আওতায় আসতে হবে। তবে অভিযুক্ত দেশের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনার আগে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতেই আগামী ৫ মার্চ বৈঠকে বসবে দুই দেশ। উলেস্নখ্য, আইনে যাই থাকুন না কেন উন্নত বিশ্বের ২৪টি দেশ তাদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে কোনো আইন প্রযোজ্য হবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডবিস্নউটিও সেল সূত্রে জানা গেছে, ডবিস্নউটিও আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও বাংলাদেশ ভর্তুকি দিয়েছে। ফলে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে সার্কুলার বাতিল করে নতুন সার্কুলার জারি করতে হবে। নয়তো যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়তে হবে। এ বিষয়ে ডবিস্নউটিও সেলের পরিচালক-১ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। এজন্য আগামী ৫ তারিখ ঢাকায় উভয় দেশ বৈঠকে বসে সমস্যার সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনে সার্কুলার বাতিল করে নতুন সার্কুলার জারি করা হবে। তবে যে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অন্যভাবে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডবিস্নউটিও আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকলে আন্তর্জাতিক পেক্ষাপট, দেশীয় পেক্ষাপট এবং পরিবহণ খরচ বিবেচনায় সুবিধা দেওয়র সুযোগ রয়েছে। তাই সার্কুলার পরিবর্তন করে রপ্তানিকারকদের এই সুবিধার আওতায় টাকা দেওয়া যাবে। এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, ডবিস্নউটিও আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও সরকার যদি দিয়ে থাকে তা কোন আইনের আওতায় দিয়েছে তা তার বোধগম্য নয়। তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে আপত্তি আসায় এর গভীরতা আরও বেড়ে গেছে। কারণ এই দেশের সঙ্গে আমাদের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সার্কুলারে বলা হয়েছে, সরকার দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশে উৎপাদিত ধান থেকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত চাল রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সুবিধা সার্কুলার জারির তারিখ থেকে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাহাজিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত ধান সংগ্রহের মাধ্যমে নিজস্ব কারখানায় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিট অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রক্রিয়াকারী-রপ্তানিকারক ভর্তুকি পাবেন। বিশেষায়িত অঞ্চল (ইপিজেড, ইজেড) এ অবস্থিত প্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মোড়ক সামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর ডিউটি ড্র-ব্যাক ও শুল্ক বন্ড সুবিধা গ্রহণ করা হলে ভর্তুকি সুবিধা পাবে না।