করোনা আতঙ্ক

ওমরাহর জন্য সৌদিযাত্রা আপাতত বন্ধের সিদ্ধান্ত

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সৌদি সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, তার অংশ হিসেবেই ওমরাহ যাত্রীদের ওপর এই কড়াকড়ি

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সৌদি আরবের মক্কায় ওমরাহ পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা -ফাইল ছবি
নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের মধ্যে আপাতত ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যারাই সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যান, মক্কার আনুষ্ঠানিকতার আগে বা পরে তারা মদিনায় মসজিদে নববিতেও যান। আপাতত সেখানেও তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই মাসে অন্তত ২ হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণ গেছে। এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশে, আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। সৌদি আরবে এখনো এ ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটলেও ইরানে ইতোমধ্যে ১৯ জনের মৃতু্য ঘটেছে এবং মধ্যপ্রাচের বেশ কিছু দেশে গত কয়েক দিনে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। আরব নিউজ লিখেছে, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সৌদি সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, তার অংশ হিসেবেই ওমরাহযাত্রীদের ওপর এই কড়াকড়ি। যেসব দেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের টু্যরিস্ট ভিসাও দেওয়া হবে না। পাশাপাশি উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোতে বসবাসরত সৌদি নাগরিকরা এত দিন জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই নিজেদের দেশে যাওয়া-আসা করার সুযোগ পেতেন। তাদের সেই সুযোগও আপাতত স্থগিত থাকবে। আটকে গেলেন ১০ হাজার ওমরাহ যাত্রী: এদিকে করোনাভাইরাসের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভিসা হওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ যাত্রী আটকে গেলেন। হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাৎ হোসাইন তসলিম জানান, ২৭ তারিখে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সব দেশের ওমরাহ ভিসা ইসু্য স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিট ভিসাও। ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে। হাব সভাপতি বলেন, 'আমি সকালবেলা সৌদি দূতবাসের সঙ্গেও কথা বলেছি। যাদের ভিসা আছে তারা যেতে পারবেন কিনা বিষয়টি অস্পষ্ট। আজকে সকালে বিমানবন্দরে আমাদের যে যাত্রীরা গিয়েছেন সকলেই অপেক্ষমাণ আছেন, কাউকেই বোর্ডিং পাস দেওয়া হচ্ছে না।' তিনি বলেন, 'সৌদি এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমরা পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে রেখেছি, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা মেইলের অপেক্ষায় আছি। এটা না আসা পর্যন্ত ওনারা কাউকে যেতে দেবেন না।' তসলিম বলেন, 'আপাতত মনে হচ্ছে, ভিসা তো নতুন করে ইসু্য হবেই না। আর যাদের ভিসা করা আছে, তারাও যেতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। তারা যেতে পারবেন না।' তিনি বলেন, 'এটা যদি হয়, আমাদের কাছে একটা হিসাব আছে। এখন প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে। এই ১০ হাজার ভিসার বিপরীতে প্রায় ৫ হাজার টিকিট কাটা আছে। ৫ হাজার টিকিটের মধ্যে ২ হাজার টিকিট লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের, যেগুলো নন-রিফান্ডেবল। সেখানে ৯ কোটি টাকার মতো টিকিট কাটা আছে।' 'ভিসাগুলোর জন্য সৌদি সরকারকে (আইবিএনের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সাধারণ ক্যারিয়ারে যে ৩ হাজার টিকিট কাটা আছে সেগুলোর জন্যও আর্থিক ক্ষতি হবে। আর সেখানে যে হোটেল ভাড়া করা আছে, এজন্য মূল্য আগেই পরিশোধ করতে হয়। ভিসা ফি আর হোটেল ভাড়া আর ফিরে পাওয়া যাবে না।' হাব সভাপতি বলেন, 'সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ইনস্ট্যান্ট ব্যয় হয়েছে, যে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এটা এখন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষতি হবে।' সকালবেলা যে বিমানগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি বলেও জানান শাহাদাত হোসাইন তসলিম।