আপিল করা হবে: মওদুদ শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ

এবারও হয়নি খালেদা জিয়ার জামিন

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খালেদা জিয়া
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে সম্মতি দিলে দ্রম্নত তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা দিতে হবে এবং মেডিকেল বোর্ড চাইলে নতুন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে আদালত এ আদেশ দেয়। গত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি (রোববার) অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি না, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না এবং শুরু হলে কী অবস্থা তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বুধবারের (২৬ ফেব্রম্নয়ারি) মধ্যে এ প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রম্নয়ারি) দিন রাখে হাইকোর্ট। ওই আদেশ অনুসারে বুধবার বিএসএমএমইউ থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি (বুধবার) আবেদনটি উপস্থাপনের পর আদালত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন। ১৮ ফেব্রম্নয়ারি (মঙ্গলবার) এই আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন। এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদন্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও। দন্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দন্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদন্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন। এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়। আপিল করা হবে: মওদুদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন তার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের পর বৃহস্পতিবার এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এসব কথা বলেন। মওদুদ আহমদ বলেন, 'সরকার ইচ্ছে করেই খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। তাই কোনো অঘটন ঘটলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। আমরা হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করব।' এদিকে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, 'আমরা আদালতকে বলেছি, তার জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রিপোর্ট তুলে ধরেছি। তার চিকিৎসা যেখানে অপরেশন হয়েছে সেখানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হওয়া দরকার। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছে। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনেছে। শুনে আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।' জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালত বলেছে, তিনি সম্মতি দিলে তাকে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দিতে। আমরা এ আদেশে সংক্ষুব্ধ। আদালতে আমাদের আবেদন গ্রহণ করা উচিত ছিল। কারণ, তিনিও একজন মানুষ।' শনিবার সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে শনিবার (২৯ ফেব্রম্নয়ারি) ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ এ কথা জানান। দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, শনিবার বেলা ২টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এই খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের হিংসাশ্রয়ী নীতিরই প্রকাশ হয়েছে। রিজভীর অভিযোগ, এই সরকার দেশনেত্রীকে অন্যায়, অন্যায্যভাবে এবং সব ধরনের আইনি অধিকার হরণ করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।