টোলারবাগে করোনা ঠেকাতে নিজেদের কোয়ারেন্টিন

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দুজনের মৃতু্যর পর রোববার থেকে রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে পুরো এলাকা লকডাউন করে দিয়েছেন -যাযাদি
টোলারবাগ আবাসিক এলাকাটি শুরু হয়েছে ডেলটা হাসপাতালের পাশ ঘেঁষে। এরই মধ্যে উত্তর টোলারবাগের দুজন মারা গেছেন। আরও কয়েকজন একইভাবে অসুস্থ। এ পরিস্থিতিতে রোববার থেকে টোলারবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে পুরো এলাকা লকডাউনের ব্যবস্থা শুরু করেছেন। এলাকার দুটি মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সেখানে নামাজ আদায় করা আপাতত বন্ধ রেখেছেন। প্রাথমিকভাবে সকাল-সন্ধ্যায় টোলারবাগের গলির মাথায় জীবাণুনাশক দেওয়া পানির ড্রাম বসিয়েছে এলাকাবাসী। সেখানে হাত-পা না ধুয়ে কাউকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। প্রতিটি বাড়ির সামনেও একই ব্যবস্থা রাখার জন্য বাড়ির মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। এলাকায় বাইরের লোকজনের প্রবেশ সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। রোববার রাত থেকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে 'করোনা মোকাবিলায় টোলারবাগের নিজস্ব মডেল' হিসেবে মনে করছেন। সরকারি কোনো সংস্থা বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। টোলারবাগ সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এলাকায় দুজন মারা যাওয়ার পর আমরা এলাকার বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এলাকাটিকে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিন করেছি। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোয়ারেন্টিনের যেসব পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার কথা বলা হচ্ছে, আমরা তা অনুসরণ করছি। যে দুজন মারা গেছেন, মসজিদে তারা নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। তাই আমরা মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে মসজিদে নামাজ পড়া আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছি। এলাকাবাসীও তা মানছেন।' টোলারবাগ সমাজকল্যাণ সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, টোলারবাগে গত ১৫ দিনে মোট পাঁচজন বিদেশ থেকে এলাকায় এসেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের একটি পরিবার অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৫ দিন আগে আসেন। চীন থেকে একজন ১৪ দিন আগে আসেন। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক সপ্তাহ আগে একজন এসে এক দিন এলাকায় থেকে পরে তিনি তার গ্রামের বাড়ি কুমিলস্নায় চলে যান। ওই ব্যক্তিকে টেলিফোন করে জানানো হয়েছে, তিনি যেন আপাতত টোলারবাগে না ফিরে আসেন। যদি আসেন তাহলে তাকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ওই ব্যক্তি কুমিলস্না থেকে আপাতত না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টোলারবাগ এলাকাটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটিকে বলা হয় উত্তর টোলারবাগ, সেটি মূলত দারুস সালাম আবাসিক এলাকার অংশ। যে দুজন করোনায় মারা গেছেন, তারা ওই উত্তর টোলারবাগের অধিবাসী। তার উল্টো দিকের এলাকাটি শুধু টোলারবাগ হিসেবে পরিচিত। ডেলটা হাসপাতাল ও পানির ট্যাংকের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ওই গলিটিতে এখনো কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। তবে ডেলটা হাসপাতালের পাশে হওয়ায় সেখানে করোনা নিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে সোমবার সকাল থেকে ডেলটা হাসপাতালেরর্ যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে সাধারণের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকা টোলারবাগের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। সেখানে ওষুধ ও খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এলাকার কেউ বাইরে যাচ্ছেন না, বাইরে থেকেও কেউ প্রবেশ করছেন না। টোলারবাগ সমাজকল্যাণ সংগঠন থেকে ওই এলাকার অধিবাসীদের সবার টেলিফোন নম্বর রাখা হয়েছে। কারও যদি খাবার বা ওষুধের দরকার হয়, তাহলে তা সংগঠন থেকে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে ফ্ল্যাটের মালিকেরা ওই অর্থ পরিশোধ করে দিচ্ছেন। টোলারবাগ সমাজকল্যাণ সংগঠনের হিসাবে টোলারবাগ আবাসিক এলাকায় মোট ২৫টি বাড়ি ও প্রায় ৫ হাজার ফ্ল্যাট আছে। সেখানকার অধিবাসীদের মোট সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার। এখানকার অধিবাসীদের বড় অংশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এলাকাটির উল্টো দিকে সরকারের ছয়টি বিভাগের নিজস্ব আবাসিক এলাকা বা কোয়ার্টার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্তসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মচারীরা সেখানে থাকেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলোকচিত্রী ও টোলারবাগের স্থায়ী বাসিন্দা ফরিদী নোমান বলেন, 'আমাদের এলাকায় এখনো কোনো করোনার রোগী ছড়িয়ে না পড়লেও সাবধানতার কারণে নিজস্ব উদ্যোগে এলাকাটি লকডাউন করেছি। গত রোববার রাত থেকে এলাকাবাসী যে যেভাবে পেরেছে নিজেদের এক সপ্তাহের খাবার ও ওষুধ বাসায় মজুত করেছে।'