বাঙালি নিধনযজ্ঞ চালায় বিহারিরা

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অগ্নিঝরা ২৪ মার্চ আজ। একাত্তরের এ দিনেও পাকসেনারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চট্টগ্রাম ও রংপুরে জনতা-সেনাবাহিনী সংঘর্ষে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হন। সৈয়দপুরে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় অবাঙালি বিহারিরা বাঙালি নিধনযজ্ঞ চালায়। পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে বীর চট্টলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ তাদের ঘিরে ফেলে। বিকালে সেনাবাহিনী অস্ত্র খালাসের জন্য বন্দর শ্রমিকদের নিয়োগ করতে চাইলে শ্রমিকরা অস্বীকৃতি জানান। পরে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বন্দরে গিয়ে হাজির হন। জনতা জেটি থেকে কদমতলী পর্যন্ত প্রায় চার মাইল পথের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড রচনা করেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জাহাজ থেকে খালাস করা কিছু অস্ত্র ১২টি ট্রাকে করে নতুন পাড়ায় আনার চেষ্টা করলে ডবলমুরিং রোডে ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকের পথরোধ করে দাঁড়ায় জনতা। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকার পর জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে পাকসেনারা। লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে জনতাও। রাতভর এ সংঘর্ষে সেনাসদস্যদের গুলিতে শহিদ হন অন্তত ২০০ শ্রমিক-জনতা। সৈয়দপুরে নিরীহ জনগণের ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে কমপক্ষে শতাধিক মুক্তিকামী মানুষ শহিদ হন। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনী ও অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এদিন সব সরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস হরতাল পালিত হয়। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কুচকাওয়াজ। টেলিভিশন কেন্দ্রে পাহারারত সেনারা এর কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার প্রতিবাদে সন্ধ্যা থেকে ঢাকা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে জনতার সঙ্গে সেনারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিত দিনভর চরম উত্তেজনা বিরাজ করে ঢাকায়। বিক্ষুব্ধ মিছিলের ঢল নামে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। মিছিল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক ডাকের দাবি আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্যবার আগত মিছিলের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। তিনি বলেন, আমি চূড়ান্ত সংগ্রামের নির্দেশ দেওয়ার জন্য বেঁচে থাকব কি-না জানি না। স্বাধীনতা আদায়ের জন্য আপনারা আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। ২৪ মার্চ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) যশোর ট্যাংক রোডের দপ্তরে স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। এদিন ঢাকায় ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেন। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আর কোনো বৈঠক নয়। আমরা সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেছি।