গার্মেন্টের দেড়শ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট মহামারি নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে পোশাকের আউটলেটগুলো বন্ধ হওয়ার মধ্যে বিদেশি ক্রেতারা অন্তত ১৪৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে বলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক সোমবার বলেন, এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৩৬টি ব্র্যান্ড তাদের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করেছে। এর মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, প্রাইমার্ক, এলকট, সিঅ্যান্ডএ, পিপকো, সিএন্ডএ জার্মানি, টম টেইলর, ওয়ালমার্ট, টম টেইল ও জারা উলেস্নখযোগ্য। 'চলমান এসব ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় দেশের এক হাজার ৮৯টি তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় ১২ লাখ শ্রমিকের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।' চীন থেকে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন কেন্দ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর কোয়ারেন্টিন ও জনসমাগম বন্ধসহ সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপের মধ্যে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে পোশাকের খুচরা বিক্রিতে ধস নেমেছে। ব্র্যান্ডগুলোর খুচরা বিক্রির দোকানগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক ইন্ডিটেক্স ও এইচঅ্যান্ডএম ইউরোপজুড়ে তাদের দোকান বন্ধ রেখেছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্রেতারা জাহাজে মাল তোলার অনুমতি দিচ্ছেন, কিন্তু গুদামের মাল নিচ্ছেন না। যেসব ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন সেগুলোও বাতিল করে দিচ্ছেন। 'সব মিলিয়ে আমরা অত্যন্ত খারাপ ও অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এত বড় ক্ষতি সামলানোর মতো কোনো উপায় নেই।' ক্রয়াদেশ বাতিল করাকে 'অমানবিক' আখ্যা দিয়ে ক্রেতাদের সমালোচনা করে রুবানা বলেন, কথা বলার সময় তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে, সেটার দায়ভার তারা নিচ্ছে না। অন্তত শ্রমিকদের সামনের তিন মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিশ্বে তৈরি পোশাকের সরবরাহকারী হিসেবে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ খ্যাতনামা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। প্রায় সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন অন্তত ৫০ লাখ শ্রমিক, যাদের বেশিরভাগই নারী। এদের অনেকের আয়ের ওপরই পুরো পরিবার নির্ভরশীল। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ পরিবারের দুই বেলা দুই মোঠো খাবার বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এখনও কোনো কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'বন্ধ হলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি।' কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের জীবিকার হারানোর ঝুঁকির মধ্যেও করোনাভাইরাস শ্রমিকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কায় পোশাক কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। অনতিবিলম্বে পোশাকশ্রমিকদের সবেতনে ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে কারখানা বন্ধ হলে সেই দায়দায়িত্ব কে নেবে সেটি পরেও আলোচনা করা যাবে। সারা বিশ্বই এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভুগছে। এই সংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আর গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের নেত্রী তাসলিমা আক্তার বললেন, 'সংকট দুয়েক মাস দীর্ঘায়িত হলে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য মালিকদের থাকা উচিত। কারণ তারা সারা বছর ব্যবসা করে।' 'সরকার চাইলে মালিকদের কম সুদে ঋণসহ অন্যান্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারে।' কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দুই দিন ধরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের বৈঠকে অংশ নেওয়া শ্রমিক নেতারা কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কারখানার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সরকার কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে কারখানা মালিকরা নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবেন তিনি জানান।